কারওয়ান বাজারের একটি চালের দোকান/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

আসছে সংযমের মাস রমজান। চলছে করোনা রোধে সাত দিনের সরকারি বিধিনিষেধ। সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে বিধিনিষেধ কার্যকর হওয়ায় দেশ কার্যত লকডাউনে। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য কিনে মজুদ করছেন ভোক্তারা। এই সুযোগে তরতর করে দাম বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে এক রাতের ব্যবধানে ১০০ টাকা।

কারওয়ান বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা দেখা গেছে/ ছবি ঢাকা পোস্ট

‘লকডানের’ আগের দিন রোববার বিকেলে কারওয়ান বাজারে চালের দাম জিজ্ঞেস করে গিয়েছিলেন কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা মোহাম্মদ নুরউদ্দিন। সোমবার (৫ এপ্রিল) সেই পরিমাণ টাকা নিয়ে বাজারে এসেছেন এক বস্তা চাল নেবেন বলে। এসে শোনেন আরও ১০০ টাকা বাড়তি লাগবে।

কারওয়ান বাজারের চালের দোকানে নুরউদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি বলেন, ‘রোববার (৪ এপ্রিল) এক বস্তা চালের দাম জেনে গিয়েছিলাম, দোকানদার বস্তা তিন হাজার ৪০০ টাকা চেয়েছিল। এখন চাল কিনতে এসে দেখি, এক রাতেই ওই চালের দাম ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। কী আর করার, বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হলো।’

গত শনিবার সপ্তাহখানেকের লকডাউনের খবরে চালের দাম কেজিতে ১ টাকার মতো বেড়ে যায়। দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। আর খুচরা বাজারে বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ১ থেকে ২ টাকা।

আজ সোমবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে জানিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা গুটিস্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আগের দিন এ চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। 

রাজধানীতে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

মোটা চালের মধ্যে আটাশ চালের দাম এখন প্রতি বস্তা ২২৫০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা। এর আগে এ চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকা। আটাশ ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকা। মিনিকেট প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১৫০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা। আর নাজিরশাইল মানভেদে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।   

কারওয়ান বাজারের এম আর ট্রেডার্সের কর্ণধার মো. আনিস খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘লকডাউনের খবরে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে খুব বেশি বলা যাবে না। গত দিনদুয়েক আগেও যে দামে চাল কিনছি সেটা এখন কৃষি মার্কেট থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মতো বাড়তি দিতে হচ্ছে। সেই দামেই আমরা বিক্রি করছি।’

কাঁঠালবাগান বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা সুমন জানান, তার দোকানে পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকা, আটাশ ৫১-৫২ টাকা, মিনিকেট ৬৩-৬৫ টাকা, নাজির ৬৭-৬৮ টাকা। চালের দাম বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে সুমন বলেন, ‘কৃষি মার্কেটেই বাড়তি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। অনেকে টাকা দিয়েও চাল পাচ্ছে না। তবে দাম বাড়ার পেছনে দায়ী ক্রেতারাই, তারা লকডাউন শুনে অতিরিক্ত চাল কেনা শুরু করেছে।’

বেশ কিছুদিন থেকে বাড়তি দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় বিয়েসহ যেকোনো ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় মুরগির দাম অপরিবর্তিত আছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়, কাঁঠালবাগান বাজারে ১৬০ টাকা রাখা হচ্ছে। অথচ আসন্ন রমজানসহ লকডাউনের ঘোষণায় রোববার এই দুই বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা হয় ১৬০-১৭০ টাকায়। অন্যদিকে দুই বাজারেই গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি।

মুরগির দাম একদিনের ব্যবধানে ১০ টাকা কমার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে সুমন নামের এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, ‘সরকার অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলায় মুরগি দাম ঠিক আছে, না হলে দেখতেন কত দাম উঠত। তবে লকডাউনের কারণে মানুষের বেশি চাহিদা থাকায় মুরগির দাম ১৬০-১৭০ টাকায়ও বিক্রি হইছে। আজ আবার কাস্টমার কম।’

লকডাউনে চালের দামে প্রভাব পড়লেও সবজিতে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। তবে আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ ৩৫-৪০, রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, মুদির দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতাদের আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে সয়াবিন তেল, আলু, ছোলা, চিনি, মুড়ি ও খেজুর কিনতে দেখা গেছে। রোজিনা বেগম নামের এক ক্রেতা জানান, তিনি রমজানের বাজার করতেই কারওয়ান বাজার এসেছেন। নিত্যপণ্যের দাম গত সপ্তাহখানেক আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে বলে ভাষ্য তার।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় সাত দিনের যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা আজ থেকে বাস্তবায়ন হচ্ছে। আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। 

এনআই/এইচকে