আয়কর মেলার পরিবর্তে অফিসে অফিসে মিনি করমেলা আয়োজন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নভেম্বর মাসের ১ তারিখ (বুধবার) থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ সেবা চলবে ৩০ তারিখ পর্যন্ত। এনবিআরের আওতাধীন সারাদেশে ৩১টি কর অঞ্চলে মাসব্যাপী মেলার মতো সেবা দেওয়া হবে। 

কর অঞ্চল-৮ এ দেখা যায়, দুটি পৃথক অফিসের নিচে পৃথক তথ্য সেবার কৃত্রিম বুথ তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে করদাতাদের জন্য চা ও মিনারেল ওয়াটার দেওয়ার মাধ্যমে আপ্যায়নের সুবিধা। 

যদিও প্রথম দিনেই করদাতাদের কাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। অফিস প্রাঙ্গণে কর্মচঞ্চল পরিবেশ তৈরি হয়নি পুরোমাত্রায়। যারা এখন রিটার্ন জমা দিতে যাচ্ছেন, অনেকটা নির্বিঘ্নে করসেবা নিতে পারছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের চারটি ওয়ার্ড, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ‘B’ আদ্যক্ষর দিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই কর অঞ্চলের করদাতা।

সরেজমিন পরিদর্শন ও কর অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, কর অঞ্চল-৮ এর আওতায় এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার করদাতা ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তি নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করছেন। সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজার সংলগ্ন ও সেগুন বাগিচায় বারডেম হাসপাতালের বিপরীত পাশে কর অঞ্চলটির দুটি পৃথক অফিস রয়েছে। দুটো অফিসেই কর সার্কেল অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল, ই-টিআইএনসহ মোট ১৩টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

জানা যায়, করদাতাদের অভিযোগ কিংবা যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য পৃথক দুটি টিমও গঠন করা হয়েছে। মূল অফিস বিজয়নগর সংলগ্ন অফিসে অতিরিক্ত কর কমিশনার অঞ্জন কুমার সাহার নেতৃত্বে একটি টিম এবং সেগুনবাগিচার অফিসে যুগ্ম কর কমিশনার জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্ব অপর একটি টিম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবেন।

শাহাদাৎ হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। রিটার্ন দাখিল করার পর তার প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আয়মেলা না হলেও মেলার একই পরিবেশে কর অফিসে রিটার্ন জমা দিলাম। অভিজ্ঞতা ভালোই। আগেভাগেই দিলাম। কারণ পরে ভিড় বাড়তে পারে।

সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে কর অঞ্চল-৮ এর কর কমিশনার মোহাম্মদ আবুল মনসুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশা করছি করদাতারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ন্যায্য কর জমা দেবেন। তারা রাষ্ট্রের উন্নয়নে অংশীদার হবেন। করদাতারা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। কারণ এরপরেও রিটার্ন জমা দেওয়া গেলেও কর অব্যাহতিসহ বিভিন্ন কর সুবিধা মিলবে না।  

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই কর অঞ্চলের আওতায় অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করারও সুযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৬০ জন করদাতা অনলাইন রিটার্ন দাখিল করেছেন। অনলাইন কর সেবা নেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে, এটা ইতিবাচক হিসাবে দেখছি।

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও কর অঞ্চল-৮ বরাবরই সাফল্য দেখিয়েছে। রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কর কমিশনার। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে তারা। চলতি অর্থবছরে কর অঞ্চলটির লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যার পূরণ করতেও সক্ষম হবে বলে মনে করছেন কর অঞ্চলের কর্মকর্তারা।

কর অঞ্চলগুলোতে যেসব সেবা মিলছে

>> প্রতিটি অফিসে উন্মুক্ত স্থান বা কার পার্কিং এরিয়ায় রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। রিটার্ন দাখিলকারী করদাতাদের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেওয়া হচ্ছে।

>> অনলাইনে কীভাবে রিটার্ন দাখিল করা যায়, সে বিষয়টি হাতে কলমে দেখিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা।

>> সব কর কমিশনার সেবা কেন্দ্রে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। থাকছে এ-চালান গ্রহণ বুথ।

>> সব কর অঞ্চলের কমিশনাররা তাদের নিজ নিজ কর অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

>> ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের ৪টি কর অঞ্চলে কেন্দ্রীয়ভাবে ও অন্য সব কর অঞ্চল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যথাযথ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে জেলা ও সিটি করপোরেশনভিত্তিক সেরা করদাতা সম্মাননা প্রদান করবে।

আরএম/জেডএস