আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন ও খালাসে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের গাফলতির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই অন্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সিস্টেম ব্যবহার করে শুল্কায়ন ও খালাস করেছে তারা। দেশের সব কাস্টম হাউসগুলো থেকে উদ্বেগজনক এমন চিত্র পেয়েছে এনবিআর। সে কারণে দেশের সব শুল্ক স্টেশনগুলো সতর্কতামূলক চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস : অটোমেশন) রাকিবুল হাসান স্বাক্ষর করা চিঠির সূত্রে এসব কথা জানা গেছে। যা গত ১১ এপ্রিল দেশের সব কাস্টম হাউসের কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এনবিআরের জনসংযোগ (পরিচালক) সৈয়দ এ মু'মেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সতর্কতার অংশ হিসেবে এনবিআর থেকে দেশের সব কাস্টম হাউসগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের সহকারী রাজস্ব ও রাজস্ব কর্মকর্তার নামে অ্যাসাইন বিল অব এন্ট্রি সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ না করে অন্য কোনো সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বা রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক শুল্কায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সব কাস্টম হাউস হতে তথ্য সংগ্রহপূর্বক পর্যালোচনা করে উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে। উপযুক্ত কারণে সাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং রাজস্ব ঝুঁকি নিরসন করা খুবই জরুরি। অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে কোনো রাজস্ব কর্মকর্তার নামে সিস্টেম হতে বরাদ্দকরা বিল অব এন্ট্রি যেন যথাযথ কারণ উল্লেখ ছাড়া কোনভাবেই অন্য কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালন না করে। সে জন্য কাস্টম হাউস হতে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ বাঞ্চনীয়। ২০১৩ সালে সাইকুম ওয়ার্ল্ড সিস্টেম চালু হলেও বিষয়টি এখন পর্যন্ত কোনো কাস্টম হাউস হতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরে আনা হয়নি। সিস্টেমের মাধ্যমে যথাযথ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, শুল্কায়নের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের নিবিড় মনিটরিং, কোনো ক্ষেত্রে অনিয়ম সংঘটিত হলে দায়ী।
 
সেখানে আরও বলা হয়েছে, ব্যক্তিদের সহজে চিহ্নিতকরণ, সর্বোপরি রাজস্ব ফাঁকি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে বিল অব এন্ট্রির শুল্কায়ন কার্যক্রম নির্ধারিত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। যদি কোনো যৌক্তিক কারণে রি-অ্যাসাইন করা প্রয়োজন দেখা দেয় তবে যুক্তিসংগত কারণ উল্লেখ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনারের লিখিত পূর্বানুমোদন নিতে হবে। তবে এ ধরনের রি-অ্যাসাইন করার কারণ যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। যুক্তিসংগত কারণ উল্লেখ না করে রি-অ্যাসাইনের মাধ্যমে নির্ধারিত কর্মকর্তার পরিবর্তে ভিন্ন কোনো কর্মকর্তাকে শুল্কায়ন সম্পাদিত হলে তা অসাদাচরণ বলে গণ্য হবে। এতে কোনো অঘটন ঘটলে অনুমোদনকারী কর্মকর্তা ও শুল্কায়নে নিয়োজিতরা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের একাধিক ইউজার আইডি হ্যাক করে প্রায় চার হাজার বিল অব এন্ট্রিতে অসংখ্য কন্টেইনার খালাসের ঘটনা ঘটেছিল। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পর্যালোচনায় ধরা পড়া ওই ঘটনায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিভিন্ন কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার চালান খালাস হয়।

বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার পর তার শুল্কায়ন থেকে শুরু করে সবকিছুই হয় এনবিআরের ‘অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম’ নামের একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে। দেশের সব বন্দর এ সফটওয়্যারের আওতায় কাজ করে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা হয় কাকরাইলে এনবিআরের কার্যালয় থেকে। কোনো চালান ছাড়তে না চাইলে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেটা বন্ধ করারও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রয়েছে।

আরএম/এসএম