স্থানীয় মার্কেটগুলোতে ক্রেতার জন্য হাহাকার
স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা মার্কেটগুলোতে নেই ক্রেতাদের ভিড়
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ চলছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সকাল ১০ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট, মার্কেট-শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঈদকে সামনে রেখে আশানুরূপ ক্রেতা পাচ্ছে না রাজধানীর এলাকাভিত্তিক মার্কেট-শপিংমলগুলো।
বুধবার (৫ মে) বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় দোকান-মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। মার্কেটের প্রতিটি দোকানে নতুন কালেকশনসহ পর্যাপ্ত মালামাল থাকলেও দেখা মিলছে না ক্রেতার। ফলে বেচা-বিক্রি ছাড়াই বসে থাকতে হচ্ছে দোকানমালিকদের।
মধ্য বাড্ডার হাজী নূরনবী মার্কেটের জেন্টেল ফ্যাশনের মালিক এরশাদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে দোকান খুলে বসে আছি। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা কম। গতবার আর এবার ছাড়া অন্যান্যবার এ সময় অর্থাৎ ঈদের বাজারে মার্কেটে পা ফেলার জায়গা থাকত না। পুরো মার্কেটে ক্রেতার ভিড় লেগে থাকত। সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা যেত। কিন্তু এবার সব দোকানিই ফাঁকা বসে আছেন। দু-একজন কাস্টমার এলেও বিক্রি হচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
একই এলাকার হাসেম আলী খান সুপার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহান বলেন, আমার দোকানে মোটামুটি ভরপুর মালামাল আছে। আছে নতুন নতুন কালেকশন। তবুও সাধারণ ক্রেতাদের তেমন একটা আনাগোনা নেই। অন্যান্যবার ঈদের এ সময় নিজের দোকানের ৩-৪ জন কর্মচারী ছাড়াও চুক্তিভিত্তিক আরও কর্মচারী নিয়োগ দিতে হত। এবার আর তা নেই।
বিজ্ঞাপন
কর্মচারীরা অলস সময় পার করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ক্রেতা মূলত নিম্ন আয়ের মানুষ। আসলে এসব মানুষের কাছে এখন টাকা নেই। সে কারণে তারা ঈদের কেনাকাটা তারা করতে আসছে না। যে অল্প কয়েকজন আসছেন, তারা বাধ্য হয়ে কিনছেন। ঈদের আগে কাপড়ের দোকানিদের বসে থাকার সুযোগ নেই। অথচ দেখুন, বেশিরভাগ দোকানিই ক্রেতা ছাড়া ফাঁকা বসে আছেন। এটা যে ঈদের বাজার, কেউ দেখলে তা বলবে?
স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এই মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, আমি একজন ছোট ব্যবসায়ী, করোনাকালের জন্য আমার ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। অন্যান্যবার ঈদের কেনাকাটা করার জন্য আলাদা বাজেট থাকত আমাদের। এর আগে প্রতি ঈদে আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও জামা-কাপড় কিনতাম। কিন্তু এবার হাতের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে অন্য সবার জন্য কেনার ইচ্ছে থাকলেও কেনা হচ্ছে না। এবার শুধু আমার দুই সন্তানের জন্য ঈদের জামা কিনতে এসেছি। বেশিরভাগ মানুষের হাতে টাকা নেই। নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য এলাকাভিত্তিক মার্কেট-দোকানগুলো ফাঁকা। অন্যবারের মতো ক্রেতাদের ভিড় নেই।
করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দেশের প্রতিটি খাত চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে শ্রমিক ছাঁটাইসহ নানামুখী কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমেছে সাধারণ মানুষের আয়। মহামারির এ সময়ে দেশে নতুন করে আরও দেড় কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
এএসএস/আরএইচ