কেএসআরএম’র ২৩১ কোটি ১৬ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি
মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাবদ ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮০ টাকা ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (কেএসআরএম) বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ওই কারখানায় অভিযান চালিয়ে জব্দ করা নথি পর্যালোচনা করে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করা হয় বলে দাবি করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।
রোববার (১৮ জুলাই) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮০ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফাঁকি দেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এবার কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্টকে শোকজ করা হবে। এরপর তারা জবাব দেবে। শুনানির পর মামলার রায় হবে। মামলার চূড়ান্ত রায়ে যে পরিমাণ টাকা ধার্য করা হবে তা জমা দিতে হবে কেএসআরএমকে।
জানা গেছে, গত ২২ জুন সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় কুমিরার ঘোড়ামারা এলাকায় কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্ট লিমিটেডে অভিযান চালায় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের নিবারক দল। কেএসআরএম স্টিল দীর্ঘদিন ধরে যথাযথভাবে মূসক পরিশোধ না করে ফাঁকি দিচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বেশকিছু নথিপত্র ও দুটি কম্পিউটারের সিপিইউ জব্দ করে অভিযানকারী দল। প্রায় ২৪ দিন ধরে পর্যালোচনার পর ভ্যাট ফাঁকির এ তথ্য বেরিয়ে আসে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৬ টন এমএস পণ্য (রড) বাজারে সরবরাহ করে কেএসআরএম স্টিল। যার বিপরীতে ১৮৮ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৪ টাকা সরকারি মূসক পরিশোধ করার বিধান ছিল। কিন্তু তা না করে প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করে ১০৩ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৮১৭ টাকা। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির নিকট সরকারের মূসক বাবদ পাওনা থাকে ৮৫ কোটি ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৬৯৫ টাকা।
অন্যদিকে কাঁচামাল ক্রয়সহ সব কেনকাটার বিপরীতে বিধি মোতাবেক মূসক কর্তন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ক্রয়ের বিপরীতে উৎসে মূসক কর্তনের কোনো দলিলাদি উপস্থাপন করতে পারেনি। এ সময়ে ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮৭ দশমিক ৩৩ টন কাঁচামাল ক্রয় করা হয়। এসব পণ্যের বিপরীতে উৎসে মূসকের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৪ টাকা। যা পরিশোধ করা হয়নি। মূসক ও উৎসে মূসক মিলে সর্বমোট ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮০ টাকা ফাঁকি দেয় কেএসআরএম।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন আরও বলেন, কেএসআরএম দীর্ঘদিন ধরে যথাযথভাবে মূসক পরিশোধ না করে নিয়মিত ফাঁকি দিয়ে আসছিল। নিবারক দলের তল্লাশি এবং তদন্তে বিশাল ফাঁকির তথ্য বের হয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিগগিরই কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হবে এবং তারা তাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, বিগত কয়েক মাসে চট্টগ্রাম ভ্যাট এ জাতীয় বেশকিছু অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা উদঘাটন করেছে। যারা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানি না। চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট থেকে কিছু জানানো হয়নি। আমরা কোনো কাগজপত্রও পাইনি। তবে আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে।
কেএম/এসকেডি