আলেশা মার্টের সংবাদ সম্মেলন

চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ব্যবসা শুরু করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট। গত ছয় মাসে বিভিন্ন ছাড়ে মোটরসাইকেল বিক্রি করে ৩৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময়ে এটি ১৪০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসান বা ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে ২১০ কোটি টাকা।

রোববার (১৮ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন আলেশা মার্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম শিকদার।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা জানুয়ারিতে আলেশা মার্ট চালু করি। প্রথম মাসে সেভাবে কোনো পণ্য বিক্রি হয়নি। এরপর আমরা ভর্তুকি দিয়ে মোটরসাইকেল বিক্রি শুরু করি। তবে অন্য পণ্যে ভর্তুকি দেওয়া হয়নি। এ সাত মাসে আমরা দেশের তিনটি শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের একটি হয়েছি। ইদানীং ই-কমার্স নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠছে। দেখতে একই রকম বলে মনে হতে পারে সবাই এক। তবে এ পর্যন্ত আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কোনো পণ্য সরবরাহকারী টাকা পাবেন না। আমরা তো তাদের অগ্রিম ৩৫০ কোটি টাকা দিয়ে রেখেছি। আমাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদেরও কোনো অভিযোগ নেই।

সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের (সিএসআর) অংশ হিসেবে আলেশা মার্ট গড়ে তোলা হয়েছে জানিয়ে মঞ্জুর আলম শিকদার বলেন, অন্য ব্যবসায় আমাদের মুনাফা হয়। এখানে লোকসান হয়। সিএসআরের অংশ হিসেবে আলেশা মার্ট এখন চলছে। নিশ্চয়ই কিছু সময় পর এ ব্যবসায়িক মডেলে পরিবর্তন আসবে। পৃথিবীতে কোথাও ই-কমার্সে সিএসআর মডেল নেই। আমরাই প্রথম এ মডেলে ব্যবসা করছি।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আমরা প্রায় সাড়ে তিন লাখ অর্ডার সার্ভ করেছি। এর মধ্যে ভোক্তা অধিকার আইনে অভিযোগ পেয়েছি মাত্র ১০টি। অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীজুড়ে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসার ধরনই হচ্ছে ডিসকাউন্ট অফার দিয়ে কাস্টমারকে আকৃষ্ট করা। কিন্তু কেউ কেউ এ ডিসকাউন্ট দিতে গিয়ে ক্রেতাদের টাকা ব্যবহার করেই অফারগুলো দিয়ে যাচ্ছে। অনেকের প্রশ্ন, ডিসকাউন্ট অফারে টাকার ভর্তুকি কোথা থেকে দিচ্ছি? আমরা, আলেশা মার্ট ক্রেতাদের টাকায় নয়, সম্পূর্ণ নিজস্ব ফান্ড থেকে এ ডিসকাউন্টের টাকা ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করে যাচ্ছে। এটি ব্যবসার কৌশল। বিশ্বজুড়ে বাজার ধরতে এটি সবাই করছে। সবার চেনা গ্লোবাল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আলিবাবাকেও অনেক বছর ধরে ভর্তুকি দিতে হয়েছে।

আলেশা মার্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষের কাছে মোটরবাইকের চাহিদা বেশি বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। তাই কাস্টমারদের আকৃষ্ট করতে অন্য পণ্যের পাশাপাশি এ পণ্যে আমরা একটু বেশি ডিসকাউন্ট দিয়েছি। গত ছয় মাসে আমরা বিভিন্ন ছাড়ে মোটরসাইকেল বিক্রি করে ৩৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছি। এ সময়ে আমাদের ১৪০ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের নিট লোকসান বা ভর্তুকি ২১০ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, আমি আরও জানাতে চাই, শুধু ডিসকাউন্ট দিয়ে আমরা বাজার দখল করতে চাইছি না। আমরা আমাদের কাস্টমারদের সেবা দিয়ে বাজার দখল করব। এ লক্ষ্যে কাস্টমারদের সুবিধার জন্য আমরা গড়ে তুলেছি নিজস্ব বাইক ডেলিভারি পয়েন্ট। ওভার দ্য ফোনে কাস্টমার কেয়ার সেবা অনেক প্রতিষ্ঠানই দিয়ে থাকে। আমাদেরও এ সেবা আছে, যা শুরু থেকেই নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অচিরেই আলেশা মার্ট নিয়ে আসবে ফিজিক্যাল কাস্টমার কেয়ার সেবা। ইতোমধ্যে এর কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি। আমার জানা মতে, বাংলাদেশে এটি এর আগে আর কেউই করেনি। যেহেতু আমাদের মোটো- ক্লিক. রিলাক্স. এঞ্জয়. তাই আপনাদের জীবনকে সহজ করতে আরও অনেক সেবা নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে আপনাদের সামনে হাজির হচ্ছি।

সম্প্রতি ইভ্যালি, আলেশা মার্টসহ এ ধরনের আরও কয়েকটি ই–কমার্সের ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় ব্যয়ের বিশাল ফারাক উঠে আসে। এরপরই গ্রাহকের আর্থিক সুরক্ষায় দেশের ব্যাংকগুলো এসব প্রতিষ্ঠানে কার্ডে লেনদেন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। সর্বশেষ শনিবার বিকাশও তাদের সঙ্গে আর লেনদেন করবে না ঘোষণা দিয়েছে।

এসআই/আরএইচ