সুবিধা নিতে তিন থেকে চার ধরনের অডিট রিপোর্ট করছে দেশের কোম্পানিগুলো। দেশের স্বার্থে কোম্পানিগুলোকে এক ধরনের অডিট রিপোর্ট তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিএ ভবনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত ‘ফিন্যান্স ফর নন-ফিন্যান্স প্রফেশনালর্স’ প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি। 

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, অনেক কোম্পানি রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ সুবিধা পেতে এক ধরনের অডিট রিপোর্ট করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে কর সুবিধা পেতে আরেক ধরনের রিপোর্ট তৈরি করে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধা পেতে আরেক ধরনের অডিট রিপোর্ট তৈরি করে। এভাবে আলাদা আলাদা অডিট রিপোর্ট তৈরি করছে। দেশের স্বার্থে সব কোম্পানির একই ধরনের অডিট রিপোর্ট করতে হবে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অডিটরদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অডিটর, কোম্পানি এবং আমরা সবাই মিলে এ কাজটি করব।

তিনি বলেন, করোনার কারণে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় এখনও আমরা পিছিয়ে আছি। তবে অর্থনীতিতে আবারও গতি ফিরতে শুরু করেছে, আমদানি-রফতানি বাড়ছে। আমরা আশা করি, দেশের অর্থনীতি খুব শিগগির করোনার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।

অনুষ্ঠানে আইসিএবি প্রেসিডেন্ট মাহমুদউল হাসান খসরু এফসিএ বলেন, চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্টরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

তিনি বলেন, তিন-চার ধরনের অডিট রিপোর্ট যাতে না হয়, আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। এতে দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হবে। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ বড়ুয়া এফসিএ, মারিয়া হাওলাদার এফসিএ, কাউন্সিল মেম্বার এন কে এ মবিন এফসিএ, সাব্বীর আহমেদ এফসিএ, মো. মনিরুজ্জামান এফসিএ, মু. মাহমুদ হোসেন এফসিএ, মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীণ এফসিএ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ বসু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বুধবার ৩০ জন অর্থনৈতিক বিষয়ক সাংবাদিক অংশ নেন। বৃহস্পতিবার আরও ৩০ জন সাংবাদিক প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অধ্যয়নকালীন সহায়তার অংশ হিসেবে কর্জে হাসানা নামের একটি প্রকল্পের অধীনে বর্তমান এবং কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের বিনা সুদে ঋণ দেবে আইসিএবি। বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ এ প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের পর একাডেমিক পরীক্ষার ফলাফল এবং পারিবারিক সচ্ছলতা বিবেচনা করে এ ঋণ দেওয়া হবে।

এ প্রকল্পের উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে মেধাবীদের সিএ পেশা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা, দেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য অ্যাকাউন্টিং পেশাজীবীদের সংখ্যা বাড়ানো, সিএ পেশায় মেধার সন্নিবেশ ঘটানো যারা শিল্পের জটিল প্রয়োজন মেটাতে এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেবে এবং দক্ষতার সঙ্গে পেশার প্রতিনিধিত্ব করবে।

মাহমুদউল হাসান খসরু এফসিএ বলেন, যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে অসচ্ছল কিন্তু চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে চায়, তাদের সহায়তার উদ্দেশ্য নিয়ে এ প্রকল্পটি সাজানো হয়েছে।

তিনি জানান, শুরুতে বিএসআরএম এজন্য স্বেচ্ছায় অনুদান দেয়। ধীরে ধীরে আরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকার, করপোরেট হাউস, দাতা সংস্থা এবং আইসিএবির সদস্যরাও সিএসআরের অধীনে এ তহবিলে অনুদান দিতে এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

প্রকল্পের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত মেনে এ তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের সহায়তা বিতরণ করা হবে যাতে তারা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পড়ার সময় এ সহায়তা কাজে লাগাতে পারে।

এমআই/এসএসএইচ