ফাইল ছবি

এক হাজার ১৪৬ কোটি ৮২ লাখ ৬২ হাজার ৭৩৯ টাকা ব্যয়ে ১১টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। 

সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।

সামসুল আরেফিন বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১২টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তিনটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের দুটি, বিদ্যুৎ বিভাগের দুটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একটি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ৪তলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাব ফেরত দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১, ডেভেলপমেন্ট অব শ্যাওলা, ভোমরা, রামগড় ল্যান্ডপোর্টস অ্যান্ড আপ-গ্রেডেশন অব সিকিউরিটি সিস্টেম অব বেনাপোল ল্যান্ড পোর্ট প্রকল্পের আওতায় খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় রামগড় স্থল বন্দর উন্নয়নের পূর্ত কাজ সম্পাদনের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ছয়টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে পাঁচটি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মোনিকো লিমিটেড, ঢাকা এর কাছ থেকে ১২৩ কোটি ৯১ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৩ টাকায় ডেভেলপমেন্ট অব রামগড় ল্যান্ড পোর্ট প্যাকেজের পূর্ত কাজ ক্রয়ের অনুমোদন প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সভায় কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের বাস্তবায়ন তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল ইস্যু করা হলে চারটি প্রতিষ্ঠানই প্রস্তাব দাখিল করে। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হয়। প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) ডব্লিউওওজেওও এবং (২) কোরিয়ার সানজিনকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এজন্য ব্যয় হবে ৪১ কোটি ৩০ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু প্রস্তাব গ্রহণের বিষয়ে কোনো সুপারিশ না করায় বর্ণিত ক্রয়ে নেগোসিয়েশন সম্পন্ন করে পিইসির সুপারিশসহ ক্রয় প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশনার জন্য উপস্থাপন করা হয়। কমিটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।

সামসুল আরেফিন বলেন, ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিসিজিপি সভার অনুমোদনক্রমে ‘কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, ফেজ-১’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে (১) রয়্যাল হাসকোনিং ডিএইচভি, নেদারল্যান্ড বি.ভি (২) ডিএইচআই, ডেনমার্ক (৩) ডেভকন বাংলাদেশ (৪) ডিপিএম বাংলাদেশ এবং (৫) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং, বাংলাদেশ এর নিয়োগ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৪০ কোটি ৯২ লাখ ২৯ হাজার ১৮৭ টাকা। 

জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত (১৭ মাস) বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩৮ কোটি ৫৭ লাখ আট হাজার ৯৬৪ টাকার ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

তিনি আরও বলেন, সব শিক্ষার্থীর কাছে তাদের কাঙ্ক্ষিত পাঠ্যপুস্তক যথাসময়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৯৮টি লটের মধ্যে ৪৬টি লটে তিন কোটি ৩৩ লাখ ২১ হাজার ১৯০ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হলে ৩০১টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ২৮৬টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক ৪৬টি লটে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৭৩ কোটি ৮২ লাখ ৮১ হাজার ১৪০ টাকায় তিন কোটি ৩৩ লাখ ২১ হাজার ১৯০ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের গড় দাম ২২ দশমিক ১৫ টাকা।

এছাড়া, খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ১২.৫ শতাংশ প্রোটিন মাত্রার ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক কোটেশন আহ্বান করা হলে একটি দরপত্র জমা পড়ে, যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ করা রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল এর কাছ থেকে এ গম সংগ্রহ করবে। প্রতি টন ৪২১ দশমিক ৩৮ মার্কিন ডলার হিসেবে ৫০ হাজার টন গমের জন্য খরচ হবে দুই কোটি ১০ লাখ ৬৯ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ১৭৯ কোটি ৫০ লাখ ৭৮ হাজার ৮০০ টাকা। খাদ্য অধিদফতরের এ প্রস্তাবে প্রত্যাশামূলক অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

অতিরিক্ত সচিব জানান, শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) প্রকল্পের প্যাকেজ নং-জি-৩৮জিআই লট-১ এর আওতায় ১৩ হাজার ৪০টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার কেনার জন্য অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (এক ধাপ এক খাম) দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি দরপত্র জমা পড়ে, যার সবগুলো রেসপনসিভ হয়।

দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ম্যান্স ইলেকট্রিক লিমিটেড, ঢাকা ট্রান্সফরমারগুলো সংগ্রহ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৮৪ কোটি ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা। এর বাইরেও শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) প্রকল্পের আওতায় ৫১ হাজার ৩৫৯টি এসপিসি পোল কেনার জন্য অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (এক ধাপ এক খাম) দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি দরপত্র জমা পড়ে, যার সবগুলো রেসপনসিভ হয়। 
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের কাছ থেকে, পোলগুলো কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৭১ কোটি ২৩ লাখ দুই হাজার ১৯২ টাকা।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা’ স্থাপন প্রকল্পের আওতায় অধিগ্রহণকৃত ভূমি উন্নয়ন কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। অধিগ্রহণকৃত ৪৯৮ দশমিক ৪৫ একর ভূমি উন্নয়ন কাজ সম্পাদনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে দুটি টেকনিক্যালি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরুজ্জামান খান, ঢাকাকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এজন্য ব্যয় হবে ২৩৯ কোটি ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩২ টাকা।

সামসুল আরেফিন আরও জানান, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি টন ইউরিয়া সার মার্কিন ডলার ৪৫০ দশমিক ৮৩৩ হিসেবে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করতে ব্যয় হবে এক কোটি ৩৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৯০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১১৫ কোটি ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৮ টাকা।

সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে মুনতাজাত, কাতার থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অপর একটি ক্রয় প্রস্তাবেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি টন ৪৩৬ দশমিক ৮৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কিনতে ব্যয় হবে এক কোটি ৩১ লাখ চার হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১১১ কোটি ৭১ লাখ ৯২ হাজার ৭২৫ টাকা। 

এছাড়াও সভায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (সার্বিক) সৌদি আরব থেকে চতুর্থ লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি টন ৪২৫ দশমিক ৮৩ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট এক কোটি ২৭ লাখ ৭৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ মুদ্রায় ১০৮ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার ২২৫ টাকা।  

এসআর/আরএইচ