রফতানি বহুমুখীকরণে ভবিষ্যতে ব্লু ইকোনমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এরইমধ্যে বহুমুখীকরণ শুরু হয়ে গেছে। কারণ মোটর পার্টস, আইটি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাত বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করছে। আগামী দুই থেকে চার বছরের মধ্যে এখাতগুলো আরো সমৃদ্ধ হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

রোববার (২৪ অ‌ক্টোবর) ব্লু ইকোনমি নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। যৌথভাবে সভার আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। 

সালমান এফ রহমান বলেন, ব্লু ইকোনমি নিয়ে আমাদের দেশে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কোন মন্ত্রণালয়ের কোন অধিদফতর কাজ করবে তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। কী ধরনের নীতি সহায়তা দরকার সে প্রস্তাবনা দিলে আমরা এটা নিয়ে কাজ করব বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা। 

তি‌নি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ৬৬৪ কিলোমিটার। কিন্তু এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার কাজে লাগাতে পারছি আমরা। আমরা যদি যৌথভাবে বা জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে বাকি সমুদ্র কাজে লাগাতে পারি তাহলে অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সামুদ্রিক সম্পদের বিশাল অঞ্চল লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোাট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। এর সঙ্গে রয়েছে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশের সব ধরনের প্রাণীজ-অপ্রাণীজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার। দুই বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের এ রায় দুটিকে প্রত্যেকেই বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় বলে অভিহিত করেছেন। এই সামুদ্রিক এলাকা প্রাকৃতিক গ্যাস এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এই সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনাতে এখন আমাদের কাজ করতে হবে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা সবসময় বেসরকারি খাতের সঙ্গে আছি এবং এর সহযোগিতায় ভবিষ্যতেও কাজ করব। ব্লু ইকোনমিকে সামনে এগিয়ে নিতে বিডাকে সহযোগীর ভূমিকায় পাওয়া যাবে বলে আশ্বস্ত করেন সিরাজুল ইসলাম। 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সমুদ্রখাতে অনেক সেক্টর রয়েছে তবে আমাদের এখই মেরিটাইম শিপিংসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের বন্দর আছে, বলা হচ্ছে এর মাধ্যমে খরচ বেঁচে যাচ্ছে। তবে বাস্তবতা দেখতে হবে তা কতটুকু। আমার দেশের শিল্পের অধিকাংশ টাকাই চলে যাচ্ছে সড়ক দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়াতে। কারখানা থেকে পণ্য বন্দর পর্যন্ত নিতে একটা বড় খরচ হচ্ছে সেটা কেউ দেখে না, সেটাও হিসাবের মধ্যে আনতে হবে। জাহাজ শিল্পের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে, আধুনিক মাছ ধরার ট্রলার হলে গভীর সমুদ্রের বড় মাছগুলো পাওয়া যাবে। সেখানেও রফতানি আয়ের বড় সম্ভাবনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, দেশের সমুদ্র পথে জাহাজের মাধ্যমে আমদানি-রফতানিতে ৯ হাজার বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। জাহাজের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রফতানির মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ হচ্ছে নিজস্ব পরিবহনে। সমুদ্র পথে ৫০ শতাংশ পণ্য নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি করতে পারলে সাড়ে ৪ হাজার বিলিয়ন ডলার সঞ্চয় হবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের পর বিশ্বব্যাপী কন্টেইনার সংকটে পড়েছে। জাহাজের পাশাপাশি সুযোগ এসেছে কন্টেইনার উৎপাদনের। এসব সুযোগ এখনই কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।

এসআই/জেডএস