চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আদায়ে প্রায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রবৃদ্ধির বিচারে আশার সঞ্চার হলেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে বেশ পিছিয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ সাময়িক হিসাব অনুযায়ী পাঁচ মাস শেষে ঘাটতি প্রায় ১৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা।

যদিও অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধিতেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এনবিআর ৮ হাজার ৭৫৩ কোটি ১ লাখ টাকা পিছিয়ে ছিল।

পাঁচ মাসে রাজস্ব আহরণের প্রধান তিন খাত আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি-রফতানি শুল্ক কোনো খাতেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। ভ্যাট বা মূসকে ঘাটতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এই খাতে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে আছে ৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার বেশি। তবে প্রত্যাশার তুলনায় ভালো করেছে আমদানি ও রফতানি শুল্কে। এ খাতে সাড়ে ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ঘাটতি ৪ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। সবচেয়ে কম ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে প্রায় ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।

রাজস্ব আদায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৬৭ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৮৭ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। যেসব সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আদায় আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে। সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

এনবিআর থেকে পাওয়া প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে শুল্ক আহরণে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। যার বিপরীতে এনবিআরের সংগ্রহ ৩৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এই খাতে ৪ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে।

স্থানীয় পর্যায়ে মূসক বা ভ্যাট বাবদ আয়ের ৪২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এনবিআর সংগ্রহ করেছে ৩৬ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। ৫ মাসে এ খাতে সরকারের আয়ের হিসাব থেকে ঘাটতি হয়েছে ৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। চলতি বছর এ খাত থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার রয়েছে এনবিআরের।

অন্যদিকে আয়কর বাবদ জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এনবিআর আদায় করেছে ২৯ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। এ খাতেও আয়ের তুলনায় ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ৪১ হাজার ১১৮ কোটি ২০ লাখ টাকার রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ করেছিল এনবিআর। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।

আরএম/এসকেডি