পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ পরিসংখ্যান (ইসিডিএস) প্রকল্পের আওতায় অঞ্চলভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব বের করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকার আয়তন ও জনসংখ্যা, অসুস্থ, আহত, মৃত্যুর (নারী, পুরুষ, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী) হিসাবও করবে বিবিএস।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) নগরীর আগারগাঁও বিবিএস মিলনায়তনে ইসিডিএস প্রকল্প নিয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। 

বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় অংশ নেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, যৌথ নদী কমিশনের একজন বিশেষজ্ঞ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান প্রমুখ। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসিডিএস প্রকল্পের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাত প্রভৃতির অ্যাসেসমেন্ট পরিমাপের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের লক্ষ্যে পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সংগঠিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিবীক্ষণের জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা, পরিবেশগত সুরক্ষা, সম্পদ, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিরূপণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা। পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু, দুর্যোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সেক্টরাল তথ্য-উপাত্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদফতর/সংস্থা থেকে সংগ্রহ করে ‘কমপাইলেশন অব এনভায়নেমেন্টাল স্ট্যাটিসটিক্স’ প্রণয়ন করা। 

জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ বিষয়ক পরিসংখ্যান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকার আয়তন ও জনসংখ্যার সঙ্গে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেমের (জিআইএস) মধ্যে সন্নিবেশ করা হবে। ‘ইউনাইডেট ন্যাশনস্ সিস্টেম অব এনভায়রনমেন্টাল ইকোনমিক অ্যাকাউন্টিং’ এর আওতায় এক্সপেরিমেন্টাল ইকো সিস্টেম অ্যাকাউন্টস্/স্ট্যাটিসটিক্স প্রণয়ন করা হবে। জেলা-উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের কার্যক্রম শক্তিশালীকরণে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহকরণে ট্যাবলেটের মাধ্যমে অ্যাপস ব্যবহার সুনিশ্চিতকরণ করা হবে।

ইসিডিএস প্রকল্পের পটভূমি তুলে ধরে প্রকল্প পরিচালক বলেন, জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস দেশের জনমিতি, জনস্বাস্থ্য, সামাজিক, অর্থনৈতিক, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্য, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য প্রভৃতির সঠিক ও সময়োপযোগী পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ আজ মারাত্মকভাবে বিপন্ন। সামগ্রিক জনজীবনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন; খরা, বন্যা, জলমগ্নতা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, বজ্রপাত, নদী, উপকূলীয় ভাঙন, ভূমিধ্বস, লবণাক্ততা, শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি কৃষি উৎপাদন, বৃহৎ স্থাপনা, ভূমি, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন প্রভৃতি সর্বোপরি মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে।

তিনি আরও বলেন, মানুষ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মাটি, বায়ু, পানি ও শব্দ দূষণ করছে যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং চারপাশের পরিবেশকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ তিনটি বৈশ্বিক কাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অগ্রাধিকার প্রাপ্ত দেশ হিসেবে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রয়োজনীয় সংলাপ ও আলোচনা করছে। বিভিন্ন দুর্যোগ ঝুঁকির ক্ষয়ক্ষতির (লস অ্যান্ড ডেমেজ) গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্বাচন করে বিভিন্ন পর্যায়ে ভালনারেবিলিটি চিহ্নিতপূর্বক তা ওভারকাম করে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে মোট দেশজ উৎপাদনের টেকসই পরিধি ও প্রবৃদ্ধি অর্জন করাই সরকারের মূল লক্ষ্য।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে। বার বার এমন কথা বিশ্ব মঞ্চ থেকে বলা হয়। তবে আমরা এটা কেন মেনে নেব? আমরা আমাদের দেশের প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরব।
 
সচিব বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের বলা হলো আমরা জলবায়ু ঝুঁকিতে আর এটা মেনে নিলাম? আমাদের কি কোন যাচাই করার মতো সক্ষমতা নেই? আমাদের তথ্য উপাত্ত আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে হবে। আমাদের তথ্য দিয়ে কথা বলার সাহস তৈরি করতে হবে।

এসআর/এসকেডি