কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড পরিদর্শন এবং দর্শনা সুগার মিলে ২০২১-২২ মৌসুমে আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন), চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের সংসদ সদস্য মো. আলী আসগার টগর, বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু, মন্ত্রণালয় ও করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এবং স্থানীয় আখ চাষিরা উপস্থিত ছিলেন। 

শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় শিল্পমন্ত্রী বলেন, একটি জাতিকে উন্নত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে শিল্প-কারখানার যে বিকল্প নেই তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেওয়া উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত দেশ বিনির্মাণে শিল্প মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি বছর চিনির চাহিদা কম-বেশি প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন এবং এর মধ্যে করপোরেশনের ছাউনির নিচে থাকা চিনিকলগুলো থেকে উৎপাদন হয় মাত্র ৮০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। বাকি প্রায় ১৭ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টনের মত  বিদেশ থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করা হয়।

শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, বেশিরভাগ চিনিকলের যন্ত্রপাতি বেশ পুরনো, কিছুর মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও ৩০-৪০ বছর আগেই। এখানে প্রায় প্রাচীন পদ্ধতিতে আখ সংগ্রহ, বাছাই, মাড়াই করা হয়। সময় এবং জনবল লাগে বেশি, সে তুলনায় উৎপাদন কম। আখচাষের জন্য দরকার বিপুল শারীরিক শ্রম। একই অবস্থা আখ সংগ্রহ থেকে মাড়াই প্রতিটি ধাপে। দেশে আখ উৎপাদন এবং মাড়াই বা চিনিকল-দুই জায়গাতেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। যদি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ে, তাহলে আখ চাষ লাভজনক হবে। বিএসআরআই উদ্ভাবিত উন্নত জাতের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ করলে আখ চাষ লাভজনক হবে। কৃষকরা আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হবে।

চিনিকলগুলোকে লাভজনক করতে পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর জোর দিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, চিনির পাশাপাশি চিনিকলগুলো থেকে বাণিজ্যিকভাবে অ্যালকোহল, ভিনেগার, জৈব দ্রাবক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহ রাসায়নিক সামগ্রী সহ-উৎপাদ হিসেবে পাওয়া সম্ভব। আখ মাড়াইয়ের পর সেখানের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি করা যায় জৈব সার। অবকাঠামোগুলোকে আধুনিকায়ন এবং শক্তিশালী করে চিনিকলের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে হবে। কম খরচে উচ্চফলনশীল জাতের আখ চাষ, উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা এবং পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। পাশাপাশি চিনিকলগুলোতে দক্ষ প্রশাসন ও অর্থনৈতিক কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের চিনিকলের সুদিন ফিরে আসবে।

বিভিন্ন চিনিকল থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আখচাষিরা আখের দাম বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমরা সমস্যাগুলো শুনলাম। কেরু অ্যান্ড কোম্পানি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। আমরা আখের দাম পুননির্ধারণের উদ্যোগ নিব। উন্নত আখের জাত উদ্ভাবনের জন্য ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি পাইলটিং করছে তাদের সিএসআরের অংশ হিসেবে। আমরা বা কৃষি মন্ত্রণালয়ও পাইলটিং করতে পারে। আখ চাষিদেরও উন্নত জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করতে হবে।

তিনি বলেন, আখের মূল্য নির্ধারণের জন্য এ সংক্রান্ত  কমিটি যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ করলে আখের দাম কিছু বাড়ানো হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি নিয়ে সরকার কিছু করতে চাচ্ছে। চিনির পাশাপাশি এখানে উৎপাদিত অন্যান্য পণ্যের চাহিদা আছে। কাজেই আমরা কেরুর সক্ষমতা দ্বিগুণ করার জন্য  এখানে দ্বিতীয় একটি ইউনিট করার চিন্তা করছি। সেটা বিয়ার হতে পারে বা জুস ফ্যাক্টরি হতে পারে।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, প্রতিমন্ত্রী চিনিকলগুলোকে লাভজনক করতে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বদলি, নিয়োগ বা প্রশাসনিক কাজে ইউনিয়ন নেতাদের হস্তক্ষেপ করা ঠিক না। 

শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করতে চাই। উচ্চফলনশীল জাতের আখ উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি। আখের সাথে সাথী ফসল করতে হবে। প্রয়োজনে রিফাইন সুগার কিনে বন্ধ মিল চালু করা হবে।

এসআই/এইচকে