সেহান জামুর কিলিক; আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে তুরস্ক থেকে বার বার ছুটে আসেন বাংলাদেশে। তুর্কি প্যাভিলিয়নের মালিকদের একজন তিনি। রাজধানীর পুলিশ প্লাজায় তার শো-রুম রয়েছে। তবে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থাকেন না। ব্যবসার প্রয়োজনে এখানে আসেন। এবারো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে এসেছেন। এ নিয়ে ১৫ বার বাংলাদেশে এলেন তিনি।

বাংলাদেশে ব্যবসা করে অনেক খুশি সেহান জামুর কিলিক। এ দেশের মানুষের পরিশ্রম ও কাজকে শ্রদ্ধা করেন তিনি। বুধবার বাণিজ্য মেলায় অনেক ভিড়ের মাঝেও ঢাকা পোস্টের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বর্তমান ব্যবসা সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলেন তুর্কি এ নারী।

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে আমি তুরস্ক থেকে বাংলাদেশে এসেছি। এ নিয়ে ১৫ বার বাংলাদেশে এলাম। আমরা সব ধরনের সিরামিক, গ্লাস, ঘড়ি, বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্প ও স্টোনসহ বিভিন্ন এক্সোসরিজ বিক্রি করছি।’

বাংলাদেশি মানুষ সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কেমন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমার পণ্য পছন্দ করছে। তারা অনেক বন্ধুসুলভ। আমার অনেক পণ্যই তাদের হাতে বানানো। এ দেশের মানুষ নিজের হাতে এ পণ্যগুলো তৈরি করে। তাদের হাতের স্পর্শে পণ্যগুলো সুন্দর হয়ে যায়। সবাই খুব পছন্দ করছে। আমাদের বিক্রিও বেশ ভালো।’ 

বাংলায় ধন্যবাদ জানিয়ে সেহান বলেন, ‘এ দেশ ও দেশের মানুষের জন্য শুভকামনা। আশা করছি আগামী সময় সবার জন্য শুভ হবে। ঢাকা পোস্টকে ধন্যবাদ।’ 

মেলার আকর্ষণ তুর্কি প্যাভেলিয়ন

বাণিজ্য মেলায় বেশ সাজানো গোছানো তুর্কি প্যাভিলিয়নের প্রতি ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকর্ষণ লক্ষ করা গেছে। ৯-১০ রকমের পণ্য আলাদা আলাদা ভাগে পুরো প্যাভিলিয়ন জুড়ে স্থান পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সিরামিকস ক্রোকারিজ, কসমেটিকস, বাহারি ল্যাম্প ও ওয়াল হ্যাঙিংসহ বিভিন্ন পণ্য। 

প্যাভিলিয়নে চোখের মণির ন্যায় নীলরঙা পণ্যগুলো দর্শকদের দৃষ্টি কেড়েছে। তুর্কিরা যাকে ইভিল আই (শয়তানের চোখ) বা গুডলাক (সৌভাগ্য) হিসেবে বিশ্বাস করে। এটি বাড়িতে থাকলে শয়তানের কুদৃষ্টি থেকে বাঁচা যায় বলে মনে করে তারা। 

ইভিল আই দিয়ে তৈরি দেয়াল ঘড়ি, ওয়াল হ্যাঙিং ব্রেসলেট, ফ্রিজের চুম্বক, চাবির রিংসহ বিভিন্ন রকম পণ্য দোকানটিতে শোভা পেয়েছে। বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা থেকে সর্বনিম্ন ২০০ টাকার পণ্য। দর্শনার্থীরা অনেকেই একে গুডলাক হিসেবে কিনছেন, আবার অনেকেই দেখতে আকর্ষণীয় বলে কিনছেন।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার দ্বাদশ দিন দুপুর থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। মাসব্যাপী মেলার পণ্য কেনাবেচা এখন পর্যন্ত না জমে উঠলেও স্টলগুলো ঘুরে দেখেন তারা।

প্যাভিলিয়নে দায়িত্ব পালনকারী রাজু এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রতি বছরই এক মাস মেলায় আমি তুর্কিস্তানের প্যাভিলিয়নের পণ্যের দায়িত্বে থাকি। ১৩ বছর ধরেই যুক্ত আছি। পণ্য ভালো বিক্রি হচ্ছে। দেখতে সুন্দর বলে দর্শনার্থীরা এতে আকর্ষণ বোধ করেন।’

প্যাভিলিয়নের ল্যাম্পের রঙিন আলোর রাজ্যে দর্শনার্থীদের ভিড় একটু বেশি। কেউ কিনছেন তো, কেউ ছবি তুলছেন। ২০ শতাংশ ছাড়ে সর্বোচ্চ ১ লাখ এবং সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা মূল্যের ল্যাম্প বিক্রি হচ্ছে। প্যাভিলিয়নে ল্যাম্পের দায়িত্বে থাকা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘মোটামুটি ভালই বিক্রি হয়েছে। সময় গেলে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি। তবে করোনার কারণে সরকারের বিধিনিষেধ নিয়ে শঙ্কায় আছি। লোক সমাগম কমছে বলে মনে হয়।’

এবারের মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড স্টল রয়েছে। এরমধ্যে তুরস্ক, ইরান, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ১১টি স্টল রয়েছে। গত ১ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরএম/আরএইচ