আল-মুসলিম গ্রুপের অর্থপাচার, যা বলল বিজিএমইএ
আল-মুসলিম গ্রুপসহ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার বিদেশে অর্থপাচার বিষয়ক অভিযোগ সংক্রান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ওপর মতামত দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) করেছে। বিজিএমইএ বলছে, স্পর্শকাতর কোনো বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পূর্বে সত্যতা যাচাই ও সংশ্লিষ্ট অংশীদের সঙ্গে যেন আলোচনা করা হয়।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিজিএমইএর কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক (অব.) স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদের উপর বিজিএমইএ সাতটি বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছে।
বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে প্রথম যুক্তি হল- প্রকাশিত প্রতিবেদনে ৬৩টি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক দুর্নীতির তদন্ত কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে শুধুমাত্র আল-মুসলিম গ্রুপের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটি ১৭৫ কোটি টাকা পাচার করেছে।
যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সংবাদ প্রতিবেদনে বিষয়টি তদন্তাধীন উল্লেখ করা হলেও তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ রকম স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করে প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়টি সাংবাদিকতার শিষ্টাচার লঙ্ঘন মনে করে বিজিএমইএ। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়া ও ব্যবসায়িক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়গুলো সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
বিজিএমইএর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে দুদক মহাপরিচালকের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে আল-মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রমাণিত না হওয়ায় কমিশন তা পরিসমাপ্ত করেছে বলে
জানায়। তাই, ডিসেম্বরে যে অভিযোগ শেষ হয়েছে সেই অভিযোগে এধরনের সংবাদ পরিবেশন গণমাধ্যমগুলোর অজ্ঞতা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলেছে বিজিএমইএ।
আরেক যুক্তিতে বিজিএমইএ জানায়, শীর্ষস্থানীয় একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত ওয়াশিংটন ভিত্তিক গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) এর ৩ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। অথচ উক্ত প্রতিবেদনে আল-মুসলিম গ্রুপ, পোশাক খাত বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম ও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এরকম একটি প্রতিবেদনকে সুনির্দিষ্ট একটি খাত বা প্রতিষ্ঠানের প্রসঙ্গে টেনে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরির চেষ্টা কী হতে উদ্দেশ্য পারে তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে থেকে যায়।
বিজিএমইএ আরো জানায়, প্রকাশিত সংবাদে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক ২৯টি বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য কর ফাঁকির বিষয়ে অনুসন্ধানের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংশ্লিষ্ট নথি ও ডকুমেন্ট যাচাই বাছাই করে বন্ড সুবিধা অপব্যবহারের কোন তথ্য পায়নি। তাহলে এই সংবাদ প্রতিবেদনে বন্ড সুবিধা অপব্যবহারের বিষয়টি কোন প্রাসঙ্গিকতায় টেনে আনা হলো এবং বিভিন্ন সময়ে মিমাংসিত অপরাপর বিষয়ের অবতারণা কেন, এ বিষয়গুলো আমাদের বোধগম্য নয় বলে জানায় বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানায়, সংবাদ পরিবেশনের আগে আনীত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ সাংবাদিকতার মূল্যবোধের মৌলিক একটি অংশ। অথচ আনীত অভিযোগের বিষয়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা উক্ত পোশাক প্রতিষ্ঠানটির লিয়েন ব্যাংক সমূহের কাছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, আর্থিক লেনদেনের তথ্য, রপ্তানিমূল্য অপ্রত্যাশিত আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে সত্যতা যাচাই করার উদ্যোগ নেওয়া যেত (এবং এখনও করা যায়)। যা না করেই একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপবাদ ও অপপ্রচার করা হয়েছে। এর ফলে শুধু উক্ত প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বরং এর ফলে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি একটি ব্যবসা ও শ্রমিক বান্ধব প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য আল-মুসলিম গ্রুপের অন্তর্গত প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা নিয়োজিত আছে। প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট হতে বিগত ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে স্বর্ণ, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে স্বর্ণ ও ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে রৌপ্য পদক পেয়েছে।
বিজিএমইএ আরো জানায়, আল-মুসলিম গ্রুপ শুধুমাত্র বিগত তিন দশক ধরে তার ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি তার ব্যতিক্রমী সামাজিক উদ্যোগ ও পদক্ষেপের কারণেও বিভিন্ন সময় প্রশংসিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় চাপা পড়া আহত ও নিহতদের উদ্ধার কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানটির ২৬০ জন শ্রমিক ও কর্মচারী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, যা প্রশংসিত হয়। শুধু তাই নয়, করোনা মহামারির সময় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে তারা পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আইসোলেশন সেন্টার ও ১২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি কোয়ারেনটাইন সেন্টার স্থাপন করেছে।
শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ মহামারির ফলে শিল্পের যে ক্ষতি ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা কাটিয়ে টিকে থাকার সংগ্রামে যখন আমাদের প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান অবিরত লড়াই করে যাচ্ছে সেই সময়ে কিছু গণমাধ্যমে হালনাগাদ করা হয়নি এমন সংবাদ শিল্প, অর্থনীতি তথা জাতির জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না বলে বিজিএমইএর বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, রপ্তানির আড়ালে আল মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) অর্ধশতাধিক ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়ে দুদক চিঠি দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
৩১ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে কমিশনের জনসংযোগ দপ্তর থেকে নিশ্চিত করা হয়।
দুদকের উপপরিচালক এদিপ বিল্লার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম ওই অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্বে পালন করছেন। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আতাউল কবির ও বজলুর রশিদ।
এমআই/ওএফ