বাণিজ্য মেলা শুরুর ১৯তম দিন শেষ হতে চলল। শুরুর প্রথম সপ্তাহের চেয়ে ক্রেতা দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লেও কাঙ্খিত বেচাকেনা হচ্ছে না বলে হতাশ বিক্রেতারা। তারা বলছেন, রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে বসা বাণিজ্য মেলার ন্যায় কেনাবেচা হচ্ছে না এখানে। মাসও শেষ হতে চলেছে। শেষ সপ্তাহে অন্তত জমে উঠবে, সেই আশায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর উপকণ্ঠে নতুন শহর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা-দর্শনার্থী আগের তুলনায় বেড়েছে। স্টলে স্টলে ক্রেতাদের ভিড়। তবে দৃশ্যত সংখ্যা বাড়লেও কেনাবেচায় প্রভাব তেমনটা নেই।

অরিজিনাল ইস্তানবুল ক্রিস্টাল টার্কিশ প্যাভিলিয়নে দেখা যায়, দামি দামি সব শোপিসের পসরা। ক্রেতাদের অনেকে ব্যস্ত দাম-দরে। কেউ ছবি কিংবা সেলফিতে। 

স্টলটির হোসনে আরা নামে বিক্রেতা বলছেন, দোকানে দামি অনেক রকমের লাইট। কিন্তু ক্রেতারা কিনছেন না। বলতে পারেন, দোকানে ভিড় বেশি, কিন্তু তাদের মধ্যে দর্শনার্থীই বেশি, ক্রেতা কম। বিক্রি সেরকম কিছু হচ্ছে না। 

টার্কিশ নারী ব্যবসায়ী সেইহান জামুর কিলিক বলেন, দোকানে নারীরা কিছু কেনাকাটা করছেন, জুয়েলারি বিক্রি হচ্ছে। অন্য হাজারও ঘর সাজানোর শোপিসের পসরা এখানে। তা বেচা-বিক্রির অবস্থা খারাপ। কাস্টমার আছে, ঘোরাঘুরি আর ফটো তোলায় ব্যস্ত। কেনার লোক কম। 

বাণিজ্য মেলা মানেই ব্লেজার বেচার ধুম পড়ে। কিন্তু ঢাকার বাণিজ্য মেলায় বেচা বিক্রি ভাল ছিল। এখানে বিক্রি কম বলছেন সুমাইয়া ফ্যাশন স্টলের মালিক আরিফ।

তিনি বলেন, দুই লাখ টাকা স্টল ভাড়া। কিন্তু সে অনুযায়ী বেচা-বিক্রি নাই। ঢাকায় ভালো ব্যবসা ছিল। বেশিরভাগ সময়ই মানুষের দেখা মিলছে। কিন্তু বিক্রির চিত্র একই রকম, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা খোলা বাণিজ্য মেলায় শেষ সময়ের আশায় আছি। হয়তো বেচা বিক্রি কিছু হবে। 

রাজিব ব্লেজার হাউজেও একই হতাশা। মালিক রাজিব বলছেন, শেষ সময়ে আশা করছি বিক্রি বাড়বে। অনেক স্টাফ হোটেল ভাড়া, খাওয়া খরচা। লাভের আশা ছেড়ে দিছি। অন্তত লোকসান যদি পুষে যায়, এই আশা।

আনোয়ার জামদানি স্টলে গিয়ে বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ কিনছেনও। তবে বিক্রেতা বলছেন, ভাড়া দিয়ে স্টল না নিলে দোকান ছেড়ে চলে যেতেন।

মেহেরুল নামে বিক্রেতা বলছেন, সারাদিনে ২০টা জামদানি শাড়িও বেচা যাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর একটু বেচাবিক্রি হয় সারাদিন যায় অলস সময়।

পিকেল হাউজের (আচার ঘর) বিক্রেতা আনোয়ার কণ্ঠে ঝরলো নানা প্রতিকূলতার কথা।

তিনি বলেন, ঢাকা থেকে দূরে এই বাণিজ্য মেলার আয়োজন। এ মেলা না এখন ঢাকার না নারায়ণগঞ্জের। ঢাকায় অফিস শেষে মানুষ ঘরে ফেরার আগে মেলায় ঢুকতো। নারীরা স্কুলে বাচ্চাদের নামিয়ে অথবা ফেরার পথে মেলায় আসতো। কেনাকাটা করে চলে যেতো। এখানে মেলায় আসতে হলে একটা দিনের হিসেব করে আসতে হয়। আবার নিজস্ব পরিবহন না থাকাও অনেক বড় কারণ। সব মিলে হতাশার একটা মেলার সময় পার করছি।

তবে তিনি আশাবাদী এ মাসের শেষ সপ্তাহটা জমবে। এক সপ্তাহের জন্য হলেও প্রতিদিন ক্রেতাদের সমাগতম ঘটবে, বেচাবিক্রি বাড়বে।

জুয়েলারির স্টলের সামনে কথা হয় মেহেরুন নিগার নামক এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে আসা-যাওয়া কঠিন। কেনাকাটা করতেই এসেছিলাম, কিন্তু অনেক দাম। বাড়তি দামে সব কেনাও যায় না। কিছু আবশ্যক কেনাকাটা করেছি।

মেলার পরিচালক ও ইপিবি সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। কেনা-বেচাও বাড়ছে। শেষ সময়ে আশা করছি আরও জমে উঠবে। সেটা আগামী শুক্রবার থেকেই আশা করছি হবে।

উল্লেখ্য, পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলায় দেশি-বিদেশি মোট ২২৫টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি ৬টি স্টল ও ৪টি মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। বাকিগুলো দেশি স্টল।

এবারও প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, জেনারেল স্টল, ফুডকোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল ক্যাটাগরি রয়েছে। মিলনায়তনের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়া রাখা হয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারেন।

প্রবেশমূল্য ও সময় : মেলা চলে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনে মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এবার প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। তবে কেউ যদি বিকাশে টিকিট নেন, তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় রয়েছে।

জেইউ/এসএম