কাস্টমস হাউজে পণ্য ছাড়করণে হয়রানির শিকার হলে ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে অভিযোগ না দিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত  সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

‘কাস্টমস হাউজে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়’, এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে হবে। জেনারেল কথা বলে লাভ নেই। আমরা আহ্বান করছি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানানোর জন্য। কবে কোথায় কী ঘটনা ঘটেছে, যেটার জন্য আপনারা ভুক্তভোগী হয়েছেন, অভিযোগ দেন আমরা ব্যবস্থা নেব।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা অনেক অভিযোগ সাংবাদিক কিংবা অ্যাসোসিয়েশনের কাছে করছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তো আমাদের কাছে করতে হবে। আমরা কোনো প্রতিকার করি কি না সেটা অভিযোগ না করলে কীভাবে জানা যাবে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন আমার মাল আটকে আছে। তার পেছনের কারণ কী দেখার চেষ্টা করি? শর্তগুলা পূরণ করছি কি না, সেটা আমরা দেখি না। হয়ত শর্ত ছিল এটমিক এনার্জি কমিশন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র লাগবে সেগুলো তাদের কাছে নেই। ঢালাওভাবে যদি বলা হয়, আমার মাল ছাড় হচ্ছে না কেন? এমন ক্লেইম দেওয়াটা ঠিক হবে না।

চিকিৎসকরা সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে যে অর্থ নেন, তা যথাযথভাবে করের আওতায় আনতে দুদকের সুপারিশ প্রসঙ্গে মুনিম বলেন, এটা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজস্ব বোর্ড তো চিকিৎসকদের এনফোর্স করতে পারে না, যে আপনারা রশিদ দেবেন। তাদের এনফোর্স করা এনবিআরের জন্য সুখকর কিছু হবে না। দুদক বরং এই অভিযোগটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দিতে পারত।

তিনি বলেন, আমরা এই সুপারিশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে করতে পারি৷ এখনো করিনি। আমরা সুপারিশটা পর্যালোচনা করছি। রেভিনিউ আদায়ের জন্য হাসপাতালের কাছ থেকে, ডাক্তারের কাছ থেকে কী ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করব। তারা কতটা ইমপ্লিমেন্ট করতে পারেন, আমরা কতটা চাপ সৃষ্টি করতে পারি। প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে একটা সার্কুলার হতে হবে। আমরা ও সেই সার্কুলার ফলো করব।

এলডিসি থেকে উত্তরণে কাস্টমস আদায়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণে আমদানি ও রফতানিতে আমাদের যে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে সেটা সক্রিয় বিবেচনায় আছে। চ্যালেঞ্জ উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো সাব-কমিটি করা হয়েছে তারাও কাজ করছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিটি ধাপেই অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। কাস্টমসের আয় কমে আসবে। কাস্টমসের আয় হ্রাস সেটা অভ্যন্তরীণ ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স থেকে রিকভার করতে হবে। আমরা সেই জায়গাটাকে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।

অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (ভ্যাটনীতি) মাসুদ সাদিক বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে প্রতিদিন বিল অব এন্ট্রি হয় ১০ হাজার। এর মধ্যে এক্সপোর্ট রিলেটেড ৫ হাজার। আমদানি বিল অব এন্ট্রি ২ হাজার। এই ২ হাজার পণ্য ছাড়ে বিলম্ব হতে পারে। পণ্য ছাড়ে অনেক রকম প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হয়। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে অভিযোগ করতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্বের সকল দেশের কাস্টমস প্রশাসন বিশ্ব কাস্টমস অর্গানাইজেশনের ১৮৩টি দেশের কাস্টমস বিভাগের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ কাস্টমসও ২৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস, ২০২২ পালন করছে। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন এবারের কাস্টমস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘তথ্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং তথ্য ইকো-সিস্টেম বিনির্মাণের মাধ্যমে ডিজিটাল কাস্টমসের সম্প্রসারণ।’

উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে মোট রাজস্বের মধ্যে ৭৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা এবং চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মোট রাজস্বের ৪১ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ কাস্টমস থেকে এসেছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

আরএম/এসকেডি