৫ বছরের জন্য সকল রফতানিমুখী খাতে অভিন্ন ট্যাক্স রেট দাবি করেছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)। একইসঙ্গে এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এনবিআরে পৃথক শক্তিশালী গবেষণা সেল স্থাপন করার পরামর্শও দিয়েছে সংগঠনটি। 

বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এমসিসিআই এসব প্রস্তাবনা দেয়। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

বাজেট প্রস্তাবনায় এমসিসিআইর নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, রফতানির ওপর ট্যাক্স দশমিক ৫ শতাংশ হয়। প্রতি বছর এ নিয়ে একটি কনফিউশন হয়। এটি একবার বাড়ানো হয়, একবার কমানো হয়। আপনারা আমাদের বলে দিন পাঁচ বছরের জন্য সব রফতানিমুখী খাতের একটা নির্দিষ্ট ট্যাক্স রেট হবে। নির্দিষ্ট ট্যাক্স রেট দিন, আমরা এক্সপোর্টকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাব। 

তিনি বিলেন, ভিয়েতনাম আমাদের খুব শক্তিশালী প্রতিযোগী। অ্যাপারেল, ফুটওয়্যার সিরমিকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশটি চীন থেকেও বেশিও শক্তিশালী প্রতিযোগী। রফতানি প্রবৃদ্ধিতে যে বিশাল সাফল্য আমরা অর্জন করেছি, তা ধরে রাখতে হলে ভিয়েতনামের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে। ভিয়েতনাম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এফটিএ করেছে। সেটার সুবিধা তারা পাচ্ছে। আমাদের প্রিভিলেজটা যখন হারাব, গ্রাজুয়েট হব, আমাদেরও ৭-৮ শতাংশ ডিউটি আসবে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এতে সবমিলিয়ে ১৬ শতাংশের মতো খরচ বাড়বে ভিয়েতনামের তুলনায়। এখানে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, এটা করতেও আমরা রাজি। 

এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট করহার এখনও বেশি। শিল্প খাতকে প্রতিযোগিতা করতে হলে এ হার কমাতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর দেশের করকাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে এখন থেকে কাজ শুরু করতে হবে। এসময় ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য তিনি এনবিআরের চেয়ারম্যানকে বিশেষ অনুরোধ করেন। যারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। 

এমসিসিআইয়ের আরেক সদস্য হাবিবুল্লাহ করিম বলেন, করদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে দূরত্ব আছে। এ দূরত্ব কমাতে হবে। উভয়ের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস কাজ করে। কর্মকর্তাদের আচরণ এমন যেন সব ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স ফাঁকি দেয়। এ মানসিকতা দূর করতে হবে।

এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা কর অব্যাহতি চাই না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী চাই, যাতে করে আইন সহজ এবং করবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হয়।

এ সময়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আমরা অবগত। এখন যে সাপোর্ট আমরা আপনাদের দিচ্ছি গ্রাজুয়েট হলে সেটা দিতে পারব না। সেক্ষেত্রে আমাদের কর বাড়াতে হবে। 

তিনি বলেন, পরপর দুই অর্থবছর করপোরেট কর কমানো হয়েছে। বর্তমানে কর্পোরেট কর ৩০ শতাংশ আছে। আমি মনে করি, কর্পোরেট কর আরও কমানোর যৌক্তিকতা আছে, কিন্তু এটার একটা ঝুঁকি আছে। রাজস্ব কমে যেতে পারে। কর আরও কমালে যে অভিঘাত আসবে, তা সইবার মতো ক্ষমতা আছে কি না, ভেবে দেখতে হবে। 

কর হার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষার জন্য যা যা করা দরকার, তাই করা হবে। এনবিআরের রিসার্স উইংকে শক্তিশালী করা হবে। রাজস্ব আদায় করবে মেশিন। আর কর্মকর্তারা গবেষণা কাজ করবেন। এনবিআরের নতুন সম্প্রসারণের প্রস্তাবে গবেষণা বিভাগকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এমসিসিআই এছাড়াও কর নির্ধারণ, আপীল, ট্রাইবুনাল, বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি (এডিআর) পর্যায়ে অনলাইনে শুনানী গ্রহণের বিধান বর্তমান আইনে প্রবর্তন করার দাবি জানায়।

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এনবিআর কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক, সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ।

 আরএম/আরএইচ