প্রাক-বাজেট আলোচনা

পুরোনো জাহাজ ভাঙতে গিয়ে প্রতি বছর শত শত শ্রমিক মারা যাচ্ছেন। এ মৃত্যু বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআরের কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক এ আহ্বান করেন।

মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে এ সময় এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন, শিপিং এজেন্ট  অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রেইট ফরওয়াডিং অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠন বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবনা দিয়েছে।

এনবিআর সদস্য মাসুদ সাদেক বলেন, প্রতি বছর পুরোনো জাহাজ ভাঙতে গিয়ে শত শত শ্রমিক মারা যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কেন? রফতানিমুখী শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে শ্রমিক-মৃত্যু বন্ধ করতে হবে। গার্মেন্টস খাতে কোনো দুর্ঘটনা হলে বড় ধরনের পদক্ষেপ দেখতে পাই। আপনারা কেন শিপইয়ার্ডগুলোকে আধুনিক করছেন না?

এসব প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক-মূত্যুর হার অনেক কমে এসেছে। আগামীতে আশা করছি এটা বন্ধ হবে। আমরা এখন গ্রিন শিপইয়ার্ড রূপান্তরের দিকে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে তিনটি শিপইয়ার্ড গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরিত করেছি। আরও ১০টির কাজ চলমান রয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে তালিকভুক্ত সব শিপইয়ার্ড গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। 

দেশের শিল্প খাতগুলোর মধ্যে বড় ঝুঁকিপূর্ণ খাত হিসেবে পরিচিত জাহাজভাঙা শিল্প। গত এক দশকে এ খাতেই শ্রমিক মারা গেছেন ১৫৬ জন। শোভন কর্মপরিবেশ না থাকা, শ্রমিক মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় দেশের শিপইয়ার্ডগুলোকে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরের নির্দেশনা রয়েছে বিদেশি ক্রেতাদের।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১৫০টি শিপইয়ার্ড নিবন্ধিত। তবে মাত্র ৪০টির মতো শিপইয়ার্ড তাদের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 

গত কয়েক দশক ধরেই জাহাজভাঙা শিল্পে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। পরিবেশের ক্ষতি, দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া ও শোভন কর্মপরিবেশের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যায় রয়েছে শিল্পটি।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. সুলতান হোসেন খান কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা ২০২০ সংশোধনের প্রস্তাব করেন। 

তিনি বলেন, লাইসেন্স নবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষ অনেক বেশি সময়ক্ষেপণ করে। লাইসেন্স নবায়নে বিলম্বের কারণে অনেক সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট বিভিন্ন দপ্তরে টেন্ডারে অংশ নিতে ব্যর্থ হয়। তাই নবায়নের ক্ষেত্রে ১০ বছরের ফি একসঙ্গে  নেওয়ার দাবি জানাই। একইসঙ্গে লাইসেন্স হস্তান্তরের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করার দাবি জানান তিনি। 

আরএম/আরএইচ