বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি- পুরাতন ছবি

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাবে। এজন্য এখন থেকেই বাংলাদেশকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশকে এখন থেকেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা শুরু করতে হবে।

শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ‘ইফেকটিভ পার্টনারশিপ উইথ দ্যা প্রাইভেট সেক্টর ফর সাসটেইনেবল গ্রাজুয়েশন’ শীর্ষক এক অনলাইন কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কর্মশালার আয়োজন করে। 

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, এফবিসিসিআই’র সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) এবং স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ সংক্রান্ত জাতীয় টাস্ক ফোর্সের সভাপতি জুয়েনা আজিজ।

ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য কী কী সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হবে প্রবন্ধে তা উল্লেখ করেন তিনি। বেসরকারি খাতের সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে সরকারের প্রস্তুতিগুলো তুলে ধরেন তিনি।

অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার লক্ষে দেশের জনগণের কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে। এর বাইরে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের পণ্য রপ্তানির জন্য নতুন বাজার অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা প্রদান, স্টার্ট আপ সমূহকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নীত করতে জোড় দিতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জানান, সরকার ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আলোচনা শুরু করেছে।

এফবিসিসিআই’র সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, আসন্ন সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য প্রণীতব্য ক্রান্তিকালীন কৌশল প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছি।

কর্মশালায় তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক, এলএফএমইএবি’র সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল মুক্তাদির, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রুপালি চৌধুরী, বিকেএমইএ’র সহসভাপতি মো. হাতেম এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের সভাপতি ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকসহ বেসরকারি খাতের বিভিন্ন সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাসমূহের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ গত ২০১৮ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত সিডিপির সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছিল। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করে।

সিডিপির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আসন্ন ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ পুনরায় উত্তরণের মানদণ্ডসমূহ পূরণে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিমূলক সময় শেষে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। তবে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য প্রযোজ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তাসমূহ বিশেষ করে বৈশ্বিক বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা এবং টিআরপিএস সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা ক্রমশ প্রত্যাহার হতে থাকবে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন গতিপ্রকৃতির সম্মুখীনও হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা ও পর্যালোচনা করার জন্য উক্ত কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।

এসআর/এইচকে