প্রায় ৮ বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্যাশের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়া ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক চলতি মাস থেকে আলাদা সাবসিডিয়ারির মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিতে যাচ্ছে।

দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও চলতি মাসের মধ্যেই সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ইউসিবি ফিনটেক কোম্পানির মাধ্যমে নতুন এবং বৃহৎ পরিসরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানি কর্মকর্তারা।  

‘উপায়’ নামে যাত্রা শুরু করবে ইউসিবিএল’র নতুন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। এর ফলে ২০১৩ সাল থেকে ‘ইউক্যাশ’ নামে পরিচালিত ইউসিবিএল’র মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১০ লাখেরও বেশি গ্রাহক স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপায় প্লাটফর্মে যুক্ত হবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্টস সার্ভিস ডিসেম্বর মাসে ইউসিবির সাবসিডিয়ারি ইউসিবি ফিনটেক কোম্পানি লিমিটেডকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার জন্য অনুমোদন দিয়েছে।

কোম্পানি কর্মকর্তারা জানান, ইউক্যাশের মাধ্যমে গত ৮ বছর ধরে সফলভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে ইউসিবিএল ব্যাংক। ট্রাফিক ফাইন, ইন্ডিয়ান ভিসা ফি, তিতাস এর বিল পেমেন্টসহ বেশ কিছু সেবা দিয়ে আসছে ইউক্যাশ। 

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা আরও বিস্তৃত আকারে দেওয়ার উদ্দেশে ইউসিবি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ বছরের ডিসেম্বর ইউসিবি ফিনটেকের অনুকূলে লাইসেন্স দেওয়া হয়।

ইউসিবি ফিনটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুল হক খন্দকার বলেন, মার্চ মাসেই যাত্রা শুরু হবে উপায়-এর। আমাদের সব বাণিজ্যিক ও কারিগরি প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আশা করি গ্রাহককে আমরা একটি সহজ, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী আর্থিক সেবা দিতে পারব।  
তিনি বলেন, উপায় সেবা চালু হওয়ার দিন থেকেই ইউক্যাশ এর গ্রাহকরা নতুন মোবাইল সেবার গ্রাহক হয়ে যাবেন। উপায় এর এমএফএস প্লাটফর্ম হবে ব্লক চেইনভিত্তিক। এখানে গ্রাহক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ইউএসএসডি ছাড়াও গ্রাহকরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। 

‘উপায়’ এর মাধ্যমে মোবাইলে টাকা লেনদেন, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট, কেনাকাটার মূল্য পরিশোধ, রেমিট্যান্স গ্রহণ, বেতন দেওয়া, এয়ারটাইম কেনা, ইন্ডিয়ান ভিসা ফি, ট্রাফিক ফাইন পেমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের ভ্যালু অ্যাডেড সেবা পাওয়া যাবে। গ্রাহকরা দেশজুড়ে ‘উপায়’ এর এজেন্ট এবং মার্চেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে এই সেবা নিতে পারবেন। 
   
সাইদুল হক বলেন, দেশের কোটি কোটি মানুষকে ধারাবাহিক ডিজিটাল আর্থিক সেবা দেওয়ার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে বেগবান করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্নের সঙ্গী হতে চায় ‘উপায়’। 

তিনি বলেন, ডিজিটাল আর্থিক সেবায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে উপায়। গ্রাহক চাহিদাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে, উৎকৃষ্ট গ্রাহক সেবা, নিরাপদ লেনদেন আর নিত্যনতুন উদ্ভাবন নিয়ে সবসময় তদের পাশে থেকে কাজ করবে উপায়। 

আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই আমাদের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য। মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস রেগুলেশন্স-২০১৮ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কমপ্লায়েন্স সংক্রান্ত নিয়মনীতি মেনেই আমরা আমাদের সেবা পরিচালনা করব, বলেন তিনি। 

ব্যাংকিং সেবা বহির্ভূত একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দেওয়ার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বেগবান করতে ২০১১ সালে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। বর্তমানে ১৫টি ব্যাংক এই সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যানুযায়ী মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা ১০ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। প্রতিদিন গড় লেনদেনের পরিমাণ ১ হাজার ৮৪৬ কোটি। 

মোবাইল ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন সাবসিডিয়ারির মাধ্যমে ইউসিবিএল মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হলে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং এর ফলে গ্রাহক লাভবান হবেন। তবে সেবা চালুর ক্ষেত্রে গ্রাহক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

জেডএস