ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথমদিন 'বাংলাদেশ ব্যাংক বিল' নিলামের মাধ্যমে বাজারের অতিরিক্ত তারল্য থেকে ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি এ বিলের বার্ষিক সুদ হবে এক শতাংশের কম।

সোমবার (৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে বাজারে অতিরিক্ত তারল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশে ব্যাংক বিল বিক্রি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নিচ্ছে মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণকারী এ সংস্থাটি।

সোমবার প্রথম দিন এক হাজার ৫০৫ কোটি টাকার ৭ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ বিল ও ১১০০ কোটি টাকার ১৪ দিন মেয়াদের বাংলাদেশ ব্যাংক বিল নিলামে কিনে নেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ৭ দিন মেয়াদি বিলের সুদহার শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং ১৪দিন মেয়াদের বিলের সুদহার শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ।  

নিলামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বিড দাখিল করতে পারলেও ব্যাংকগুলোই এ নিলামে অংশ নেয় বেশি।

সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) পাঁচ বছর-মেয়াদি বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড বিক্রয়ের (রি-ইস্যু) নিলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত হবে। এ নিলামে গত ১৮ মার্চ ইস্যকরা ৫ বছর-মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২০২৬ সালের ১৮ মার্চ, এক কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের (বন্ড রি-ইস্যু করা হবে।

এছাড়া বুধবার (১১ আগস্ট) ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব পরিচালনাকারী যে কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব বা তাদের ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী গ্রাহকদের পক্ষে বিড দাখিল করতে পারবেন।

প্রতি ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের (ফেস ব্যালু) জন্য ডিসকাউন্টে বিলের প্রস্তাবিত ক্রয়মূল্য (অফার প্রাইজ) উল্লেখসহ মোট অভিহিত মূল্য উদ্ধৃত করে ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় নিলামের দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত এমআই মডিউলের মাধ্যমে বিড দাখিল করতে হবে। একই দিনে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং নিলামের ফল দুপুর ২টার মধ্যে ঘোষিত হবে। নিলামে অংশগ্রহণের বিশদ পদ্ধতিগত নির্দেশনা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিল নিলামেরও লক্ষ্য রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।  

এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ তথা ২ পয়সা সুদে ৭ দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা রেখেছিল। এরপর থেকে নিলাম বন্ধ ছিল। বাজারে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে নিলামের বিষয়টি জানানো হয়।

আশানূরূপ ঋণ চাহিদা না থাকায় গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর সিআরআর সংরক্ষণের পর অলস পড়ে আছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই সময়ে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ যেন অনুৎপাদনশীল খাতে গিয়ে মূল্যস্ম্ফীতির ওপর চাপ তৈরি করতে না পারে সে জন্য এভাবে টাকা তোলা হচ্ছে।

এর আগে গত ২৯ জুলাই চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে অস্থিরতা তৈরি করলে তা তুলে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বা সম্পদের দাম বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণ কর‌বে।

এসআই/এসএম