করোনাভাইরাসের কারণে ভিড় এড়াতে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। ফলে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহকের সংখ্যা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এখন সহজ ও জনপ্রিয় একটি সেবা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা ৬৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় দুই হাজার ১৭১ কোটি টাকা। আগস্টে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল দুই হাজার ৭ কোটি টাকা; ওই মাসে মোট লেনদেন হয়েছিল ৬২ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। তবে ডাক বিভাগের সেবা নগদের তথ্য এই হিসাবে আসেনি।

দেশে এমএফএসে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকার মতো। ঘণ্টায় লেনদেনের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি। 

নগদের তথ্য যোগ হলে মোট লেনদেন আরও ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাবে। দৈনিক লেনদেন বাড়বে সাড়ে ৭শ কোটি টাকার মতো। এ হিসাবে দেশে এমএফএসে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকার মতো। ঘণ্টায় লেনদেনের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি। 

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ১৩টি ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে টাকা জমা পড়ে (ক্যাশ ইন) ১৯ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এ সময়ে উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়েছে ১৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে পাঠানো হয় (সেন্ড মানি) ১৯ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা।

গত সেপ্টেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে কেনাকাটার বিল পরিশোধ হয়েছে দুই হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। ওই সময়ে সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা প্রদানের পরিমাণ কমে ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা হয়েছে। দুই হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান, ৬৫২ কোটি টাকা মোবাইল ফোনের ব্যালান্স রিচার্জ ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ বাবদ এক হাজার ৩৩১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

সেপ্টেম্বর শেষে এমএফএস সেবায় ১১ লাখ ৪২ হাজার এজেন্ট যুক্ত রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায়। নিবন্ধিত গ্রাহক ১০ কোটি ৬৪ লাখ ৭১ হাজারের বেশি। এর মধ্যে তিন থেকে চার কোটি হিসাবে প্রতিমাসে নিয়মিত লেনদেন হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে এমএফএস সেবায় ১১ লাখ ৪২ হাজার এজেন্ট যুক্ত রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায়। নিবন্ধিত গ্রাহক ১০ কোটি ৬৪ লাখ ৭১ হাজারের বেশি। এর মধ্যে তিন থেকে চার কোটি হিসাবে প্রতিমাসে নিয়মিত লেনদেন হয়।

দেশের এমএফএস সেবাদানকারী সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষ এখন ঘরে বসে ডিজিটাল লেনদেনে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পাশাপাশি সরকার সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা মোবাইল হিসাবে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও মোবাইলে পরিশোধ করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। সবমিলিয়ে মোবাইল ফাইন্যান্সের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ছে। এমএফএসে দিন দিন নতুন নতুন সেবা যুক্ত হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে এমএফএস সেবার আওতা ও পরিধি আরও বাড়বে বলে আশা করি।

জানা গেছে, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

এসআই/আরএইচ/জেএস