চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ৭৭ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হওয়া বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের শেয়ারের মঙ্গলবার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩৮ টাকা ২০ পয়সায়। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে ৩৮ টাকা।

একইভাবে বহুজাতিক আরেকটি কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ারের দাম গত ১১ ফেব্রুয়ারি ছিল ১৭০০ টাকা। মঙ্গলবার সে শেয়ার বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫১২ টাকা দরে। কয়েক দিনের ব্যবধানে শেয়ার প্রতি প্রায় ২শ টাকা নেই। অথচ কোম্পানিটি ৪০০ শতাংশ নগদ এবং ২০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়ার পর দরপতন থেকে রেহাই পায়নি।

এভাবেই গত এক মাসে সূচক কমেছে ৪৯৭ পয়েন্ট। তাতে বিনিয়োগকারীদের ৩১ হাজার ২৭৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা উধাও। তার মধ্যে সর্বেশেষ পাঁচ কার্যদিবসে ১৭ হাজার ৮৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা উধাও হয়েছে। এসময়ে সূচক কমেছে ২২৭ পয়েন্ট।

গত এক মাসে বেশির ভাগ সময় পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। নতুন করে আরও দরপতন হতে পারে এমন আশঙ্কায় চরম হতাশায়  রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বাজারের এই অবস্থার পেছনে দায়ী করেছেন নতুন করে বেশ কিছু কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেওয়াকে। তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাজার বিশ্লেষক, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কেউ পতনের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান দরপতনের কোনো যৌক্তিক কারণই দেখছি না। পুঁজিবাজার হলো উত্থান-পতনের খেলা, এখানে যেসব বিনিয়োগকারী বুদ্ধিমান তারাই মুনাফা লাভ করবে। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের উচিৎ জেনে বুঝে ভালো কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগ করা। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত মঙ্গলবার থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন যে লেনদেন হয়েছে তাতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২২৭ পয়েন্টে কমে ৫ হাজার ৩১৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়। লেনদেন হাজার কোটি টাকা থেকে অর্ধেক কমে ৫০০ কোটি টাকাতে নেমে আসে।

প্রায় সব শেয়ারের দাম ও সূচক কমায় এই সময়ে বিনিয়োগকারীদের মূলধন অর্থাৎ পুঁজি ১৭ হাজার ৮৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা কমে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪ কোটি ১৫ লাখ ২৪ হাজার টাকায়। অথচ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

দরপতনকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজারে ওঠানামা হবে এটা স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা অস্বাভাবিক ঘটনা। কমিশনের উচিৎ এই দরপতন কী কারণে হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা। প্রয়োজনে একটি তদন্ত করা।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়দুর রহমান বলেন, কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছিল, এখন কমছে, মূল্য সংশোধন হচ্ছে। এ ছাড়া আর কোনো কারণ নেই বলে জানান তিনি।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা একটুতেই হতাশ হয়ে পড়েন। তারা যখন শেয়ার কেনার দরকার তখন ধরে রাখেন, যখন বিক্রির দরকার তখন কেনেন। এই মানসিকতার পরিহার করতে হবে। তবে তিনি মনে করেন শিগগিরই পুঁজিবাজার ভালো হবে, ঘুরে দাঁড়াবে।

ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেশি বিক্রি হচ্ছে, ফলে দরপতন হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে সঠিক রুল পালন করতে হবে। মার্চেন্ট ব্যাংক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে সাপোর্ট দিতে হবে। তারাও যদি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো আচরণ করে তবে পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যহত থাকবে। 

এমআই/এনএফ