প্রতীকী ছবি

সরকার নির্ধারিত ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে আরও ৭৩ জন ব্যক্তি পুঁজিবাজারে কালো টাকা সাদা করেছেন। এর ফলে চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম ছয় মাসে মোট ২০৫ জন ব্যক্তি পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করলেন। বিনিয়োগ করা এই অর্থের পরিমাণ ২৪০ কোটি টাকা। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগেও একাধিকবার বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করতে অর্থাৎ কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়।

এনবিআরের তথ্যমতে, জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১৩২ জন ব্যক্তি ১৮ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব দিয়ে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। নভেম্বর মাসে আরও ৭৩ জন ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে পুঁজিবাজারে এই অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। সব মিলে জুলাই থেকে ডিসেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত ২০৫ জন ব্যক্তি পুঁজিবাজারে ২৪০ কোটি কালো টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এজন্য সরকারকে কর দিয়েছেন ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকার উৎসের ব্যাখ্যা ছাড়াই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে শর্ত দেওয়া হয়, যেকোনো ব্যক্তি ১০ শতাংশ হারে কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করলে তার অর্থের উৎস নিয়ে কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এই অর্থ পুঁজিবাজারে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগের ৩০ দিনের মধ্যে কর পরিশোধ করতে হবে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনোরকম প্রশ্ন ছাড়াই কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এর ফলে বাজারে নতুন নতুন ফান্ড আসতে শুরু করেছে। আর তাতে দীর্ঘদিন ধরে তারল্য সংকটে থাকা পুঁজিবাজারে লেনদেন দিগুণ হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দুটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ধারা দুটো মেনে অপ্রদর্শিত সম্পদ ও অর্থ পুঁজিবাজারে, জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট কেনায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। এর ফলে একদিকে নতুন পুঁজি এল। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বাড়ল। তবে সরকারকে এ বিষয়ে নজর রাখার তাগিদ দেন তিনি।

চলতি বছরের বাজেটে বলা হয়, প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের চলতি অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, ভবন, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষসহ আরও কেউই প্রশ্ন করতে পারবে না। একই সময় ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতারা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে, ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে, আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না।

ফলে পুঁজিবাজারে পাশাপাশি বাকি খাতগুলোতেও কালো টাকা সাদা হচ্ছে। তাতে জুলাই থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা জমি, অ্যাপার্টমেন্ট, নগদ, ব্যাংক আমানত এবং অন্যান্য সম্পদ বৈধ করেছেন। তাদের অবৈধ সম্পত্তি বৈধ করতে গিয়ে মোট প্রায় ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা কর আদায় করেছে। যা দেশের স্বাধীনতার পর থেকে এক বছরের হিসাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ।

এ বিষয়ে এনবিআর কর বিভাগের সদস্য কলিপদ হালদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে এখন পর্যন্ত বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। যতটুকু জানি চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা যেকোনো অর্থবছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। ভবিষ্যতে আদায়ের এই হার আরো বাড়বে বলে মনে করি।

বাজেটে দেশীয় বিনিয়োগ চাঙা করতে এর আগের অর্থবছরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে একই হারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই সুযোগ বহাল থাকবে।

এমআই/জেডএস