২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট আগামী বৃহস্পতিবার (৩ জুন) ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

নতুন বাজেটে যদি এসব দাবি বিবেচনা করা হয় তাহলে দেশের পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বাড়বে। একইসঙ্গে বাড়বে বিনিয়োগকারীর আস্থাও। তাই ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের দিকে তাকিয়ে আছেন ২৬ লাখ ৫৭ হাজার বিনিয়োগকারী এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা, আসন্ন বাজেটে থাকবে পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। কমবে লভ্যাংশের ওপর কর হার।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর ও লেনদেনের ওপর আরোপিত অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) কমানো হবে। এছাড়াও সুকুক, কর্পোরেট এবং ট্রেজারি বন্ডেরও ওপরও কর হার কমার আশা তাদের।

এসব সুবিধা পেলে দ্রুত সূচক, লেনদেন বেড়ে পুঁজিবাজার চাঙা হবে। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ভালো মুনাফা হবে। এতে লাভবান হবেন বিনিয়োগকারীরা।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, ২ জুন পর্যন্ত দেশের পুঁজিবাজারে ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৮টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব রয়েছে। একটি বিও হোল্ডার যদি একজন বিনিয়োগকারী হয় তবে সে হিসেবে মোট বিনিয়োগকারী ২৬ লাখ ৫৭ হাজার। এর মধ্যে ১৯ লাখ ৬০ হাজার ১০৫ জন পুরুষ বিনিয়োগকারী। আর নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৬ লাখ ৮৩ হাজার ২৯২।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রত্যাশা অনুসারে বাজেট হলে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়বে। নতুন করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারে প্রবেশ করবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগটা থাকবে। পাশাপাশি করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমে সাড়ে ২২ শতাংশ করা হবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, বন্ডে ট্যাক্স বেনিফিট দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম। এ সুযোগ পেলে যারা বিনিয়োগে সক্ষম কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত ও ভালো মুনাফার অভাবে বিনিয়োগ করছেন না, তারা নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। এছাড়া পুঁজিবাজারের জন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হার কমানোর সুবিধা চেয়েছি। মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলোর জন্য কিছু ছোট ছোট জিনিস চেয়েছি। আশা করছি এসব সুবিধা পাব।

চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, বাজেটে বন্ডের সুদের ওপর কর প্রত্যাহার এবং করমুক্ত লভ্যাংশের আয় সীমা ২ লাখ টাকা করাসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে করপোরেট করের হার কমানো। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য কর রেয়াতের সময়সীমা বাড়ানো। ন্যূনতম ২০ শতাংশ শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে হস্তান্তর করলে আয়কর রেয়াত লাভের বিদ্যমান সু্যোগ শর্তসাপেক্ষে তিন বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে, তালিকাভুক্তির বছর ১০ শতাংশ কর রেয়াত দিতে হবে। তবে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকতে হবে। ২য় ও ৩য় বছর ৫ শতাংশ কর রেয়াত দিতে হবে।

আসিফ ইব্রাহিম বলেন, কর রেয়াতের কারণে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। এতে পুঁজিবাজারে গুণগত মানসম্পন্ন শেয়ারের যোগান বাড়বে যা বাজারে লেনদেন বাড়ানোসহ স্থিতিশীলতা আনতে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। ফলে জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান আরও বাড়বে। একইসঙ্গে স্মলক্যাপ বোর্ড (এসএমই) কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন কর হার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এসএমই কোম্পানিগুলোর জন্য তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে ৫ বছরের জন্যে ১০ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, সাধারণত স্বল্প মূলধনী কোম্পানিসমূহ প্রাইভেট লিমিটেড হিসেবে নিবন্ধিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কাঠামো দুর্বল হওয়ায় সরকারের তেমন রাজস্ব আদায় হয় না। পুঁজিবাজারের এসএমই বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী তালিকাভুক্ত হলে অধিক সংখ্যক কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হবে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা বাড়ানো। এক্ষেত্রে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা যেতে পারে। তালিকাভুক্ত-অতালিকাভুক্ত বন্ডের সুদের ওপর কর অব্যাহতির দাবি জানিয়েছি।

সিএসই চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে শুধুমাত্র জিরো কুপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে করমুক্ত। দেশের অর্থনীতির আকার এবং ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট তৈরি করা অতি জরুরি। এ পদক্ষেপ পুঁজিবাজারের পাশাপাশি আর্থিক খাতেও শৃঙ্খলা আনতে পারে। সে কারণে নতুনভাবে একটি বন্ড মার্কেট তৈরির লক্ষ্যে সব বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয় করমুক্ত করা প্রয়োজন এবং জিরো কুপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়ের করমুক্ত সুবিধা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব করদাতাকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

বিনিয়োগকারী আতাউল্লাহ নাঈম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যক্তি আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা, লভ্যাংশের ওপর কর কমানোর পাশাপাশি লেনদেনের ওপর উৎসে কর কমানো হলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবে। নতুন করে আরও অনেক বিনিয়োগকারী বাজারে আসতে শুরু করবে।

উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চলতি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

এমআই/এসকেডি