প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারকে নিয়ে ‘নেগেটিভ’ কিছু রাখা হয়নি। বরং বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। বস্ত্র খাতে ১ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি প্রকৌশল, সিমেন্ট এবং চামড়া খাতের বেশি কিছু কোম্পানিকে কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

এসব কারণে বাজেটের পর প্রথম দুদিন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও তা কাটিয়ে উঠেছে দেশের পুঁজিবাজার। এতে একদিকে সূচকের উত্থান হচ্ছে অন্যদিকে বাড়ছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

অপরদিকে বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পাচ্ছেন। আর তাতে বাজার মূলধনের দিক থেকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ইতিহাসের সর্বোচ্চ সিংহাসনে আরোহণ করেছে।

ডিএসইর তথ্য মতে, গত বৃহস্পতিবার (৩ জুন) ২০২১-২০২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১৮২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। লেনদেনের পাশাপাশি এদিন আগের দিনের চেয়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৫৩ পয়েন্টে অবস্থান করে। সূচক ও লেনদেন বাড়ার দিনে ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিন থেকে ৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বেড়ে ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৪৭ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এরপর  বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিনদিন সূচকের উত্থান আর দুদিন পতন হয়েছে। তাতে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ৫ লাখ ৯ হাজার ৯৩৭কোটি ৭৭ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। যা বাজার মূলধনের দিক দিয়ে পুঁজিবাজার অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ মূলধন বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ সিংহাসনে এখন পুঁজিবাজার।

বিনিয়োগকারী আতা উল্লাহ নাঈম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজেটে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল অনেক। ফলে কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা, বন্ডের কর কমানোর এবং তালিকাভুক্ত অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান কমানো এগুলোর কোনো টাই নেই। সেই ধাক্কায় প্রথম দুদিন দরপতনও হয়েছে। আমাদের মধ্যে ভয় ছিল মার্কেট পড়বে। তবে সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠেছে এখন এই ভয় বিনিয়োগকারীদের কেটে গেছে।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নতুন করে নেগেটিভ কিছু আরোপ করা হয়নি। এটা বাজারের জন্য পজিটিভ ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, এবারে বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর ২৫ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ কমানো হয়েছে। যা পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত পজিটিভ বিষয়। এতে কোম্পানিগুলো আগামীতে আরও ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে। সাধারণ কোম্পানির মতোই ব্যাংক-বিমা কোম্পানির করপোরেট কর কমানো হলে বাজারে আরও বেশি পজিটিভ ইমপ্যাক্ট পড়তো।

বিজিএমইর সাবেক সভাপতি ও ডিএসইর পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, করপোরেট করের পাশাপাশি বস্ত্র খাতে পোশাক রফতানির উপর ১ শতাংশ করে প্রণোদনা রাখা হয়েছে। তাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা আরও বাড়বে। এছাড়াও সিমেন্ট ও প্রকৌশল এবং চামড়াজাত পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। দেশীয় কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিতে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তিনটি খাতের মধ্যে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে যেসব ক্রসড ফেব্রিকস, ইয়ার্ন আমদানিতে শুল্ক কমবে ১০ শতাংশ। আগে এসব আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। ফলে চামড়াজাত খাতের কোম্পানি এপেক্স ফুটওয়্যার, বাটা সু, ফরচুন সুজ এবং লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ভালো মুনাফা করতে পারবে।

প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারে জন্য পজিটিভ বলে উল্লেখ করেছেন ডিএসইর সাবেক পরিচালক শরিফ আতাউর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট হয়েছে। তবে বিনাশর্তে কালো টাকার সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে আরও পজিটিভ হতো।

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করপোরেট কর কমানো হয়েছে। কালোটাকার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আশা করছি, বাজেটে সংযোজন করা হবে। এছাড়াও বন্ড মার্কেটকে গতিশীল ও লেনদেনযোগ্য করতে কর ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি, এগুলো পেলে পুঁজিবাজার আরও গতিশীল হবে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবারের বাজেট ভালো হয়েছে। তবে কালোটাকা বিনিয়োগসহ আমরা চারটি দাবি অর্থ মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি, এগুলো বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারের আরও ভালো হবে। বর্তমানে ২ হাজার কোটি টাকার কোটায় লেনদেন হচ্ছে। এটা আড়াই থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার কোটায় লেনদেন হবে।

এমআই/এসকেডি