• এক মাসে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৮০ টাকা
• তিন মাসে মূলধন বেড়েছে ১৭৩ কোটি টাকা

দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে মোট অক্সিজেনের চাহিদা ২০০ থেকে ২২০ টন। এই অক্সিজেনের ১৬০ থেকে ১৭০ টন সরবরাহ করছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড।

উৎপাদন বৃদ্ধির খবরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দামও বাড়ছে। ১৫ কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানটি গত তিন মাসে ১৭৩ কোটি ৪৮ লাখ ৮৬ হাজার ২০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে এর বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১০৪ কোটি টাকায়। প্রতিনিয়ত শেয়ারের দাম বাড়ায় পুঁজিবাজার চাঙা রাখতে অবদান রাখছে লিন্ডে বাংলাদেশ। করোনায় মুনাফার এই উত্থান থেকে এরই মধ্যে নতুন করে দেশীয় তিনটি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন উৎপাদন শুরু করেছে। 

লিন্ডে বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে অর্থাৎ এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন ৯০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করতো। মে-জুন মাস থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর করোনার রোগীদের প্রধান উপকরণ হচ্ছে অক্সিজেন। ফলে অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়তে থাকে। 

১৫ কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানটি গত তিন মাসে ১৭৩ কোটি ৪৮ লাখ ৮৬ হাজার ২০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে এর বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১০৪ কোটি টাকায়। প্রতিনিয়ত শেয়ারের দাম বাড়ায় পুঁজিবাজার চাঙা রাখতে অবদান রাখছে লিন্ডে বাংলাদেশ

আগে যেখানে হাসপাতালগুলোতে দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টন, সেখানে এখন প্রয়োজন হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টন। এই প্রয়োজন মেটাতে লিন্ডে বাংলাদেশ বর্তমানে দৈনিক ১৬০ থেকে ১৭০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করছে। অর্থাৎ ৭৩ থেকে ৭৫ শতাংশ উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি ৫০ থেকে ৬০ টন উৎপাদন করছে দেশীয় পাঁচ প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হচ্ছে- স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড, ইসলাম অক্সিজেন, এ কে অক্সিজেন, ইউনিয়ন অক্সিজেন ও আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং মিল। তাদের মধ্যে স্পেকট্রা ও ইসলাম অক্সিজেন উৎপাদন করছে ২০ শতাংশ। বাকি ২ থেকে ৫ শতাংশ উৎপাদন করছে এ কে অক্সিজেন, ইউনিয়ন অক্সিজেন ও আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং মিল।

উৎপাদন হিসাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি একাই মোট চাহিদার ৭৩ থেকে ৭৫ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করছে। ফলে এপ্রিল থেকে গত ৩১ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেড়েছে ৩৭১ শতাংশ। এ খবরে এর শেয়ারের দাম ১১৪ টাকা থেকে বেড়ে এক হাজার ৩৮২ টাকায় সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে। গত এক মাসে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ৮০ টাকা।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সচিব আবু মোহাম্মদ নেসার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন সময়ে অক্সিজেনের চাহিদা কম থাকে। কিন্তু এ বছর করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। ফলে অক্সিজেনের উৎপাদন ও বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি একাই মোট চাহিদার ৭৩ থেকে ৭৫ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করছে। ফলে এপ্রিল থেকে গত ৩১ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেড়েছে ৩৭১ শতাংশ। এ খবরে এর শেয়ারের দাম ১১৪ টাকা থেকে বেড়ে এক হাজার ৩৮২ টাকায় সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে। গত এক মাসে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ৮০ টাকা

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল-জুন সময়ের চেয়ে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ৫৪ পয়সা। যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪ টাকা ৭৯ পয়সা। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে প্রায় ১৮ টাকা মুনাফা বেড়েছে। 

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সায়েকা মাজেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে এখন প্রতিদিন ২০০ থেকে ২২০ টন অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। আমাদের কারখানা দুটি সম্পূর্ণ সক্ষমতা দিয়ে অক্সিজেন উৎপাদন করছে। প্রতিদিন আমরা ১৬০ থেকে ১৭০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করছি।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদন বাড়ায় এর শেয়ারের দাম ১২ এপ্রিল থেকে বাড়ছে। ওইদিন শেয়ারের দাম ছিল এক হাজার ২৬৮ টাকা। সেখান থেকে ১১৪ টাকা বেড়ে গত ৩ আগস্ট লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩৮২ টাকায়। এর মধ্যে ৫ জুন শেয়ারটি দাম ছিল এক হাজার ৩০২ টাকা ৮০ পয়সা। গত ৩ আগস্ট ৮০ টাকা বেড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩৮২ টাকায়। 

শেয়ারের দাম বাড়ায় ১৯৭৬ সালে ১৫ কোটি ২১ লাখ আট হাজার টাকার বাজার মূল্যের প্রতিষ্ঠানটি গত তিন মাসে ১৭৩ কোটি ৪৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১০৪ কোটি আট লাখ ২২ হাজার টাকায়। অর্থাৎ ৪৫ বছরে প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য ১৪০ গুণেরও বেশি বেড়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানটির এক কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার ৩০০টি শেয়ারের মধ্যে এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৬০ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ার। গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগের বছর (২০১৯ সাল) দেওয়া হয় ৫০০ শতাংশ লভ্যাংশ।

এমআই/এমএআর/এইচকে