• জানুয়ারিতে এসেছেন ৮০ হাজার
• বেশিরভাগই আইপিওর বিনিয়োগকারী

গত চার মাসে পুঁজিবাজারে ৩ লাখ ৫৫ হাজার নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হয়েছেন। রবি আজিয়াটা, এনআরবিসি ব্যাংকসহ বাজারে বেশ কিছু কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাচ্ছেন। যে কারণে তারা বাজারে যুক্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তিনি আইপিওতে সংস্কারসহ একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছেন। পাশাপাশি অধিকাংশ শেয়ারের দাম বাড়ায় পুরনো অনেক বিনিয়োগকারী নতুন করে বাজারে ফিরছেন।

বিএসইসির তথ্য মতে, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে রবি আজিয়াটা, এক্সপেস ও ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন, ডমিনেজ স্টিল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। অপরদিকে এনার্জিপ্যাক, ওয়ালটন, এডিএন টেলিকম, মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড তালিকাভুক্ত হয়েছে। এগুলো ছাড়াও এনআরবিসি ব্যাংক, লুব রেফ লুব্রিকেন্টসসহ বেশ কিছু কোম্পানির আইপিওর সাবক্রিপশন হয়েছে। আরও কোম্পানির আইপিওতে আসার অপেক্ষা রয়েছে, সামনে আরও কোম্পানির সাবস্ক্রিপশন হবে। তাতে বিও হিসাব দিনদিন বাড়ছে বলে মনে করছে শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে, মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৪১ হাজার ৭৫০টি। গত বছরের ১ অক্টোবর বিনিয়োগকারীদের এই বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৪টি। সে হিসেবে গত চার মাসে পুঁজিবাজারে নতুন করে বিও হিসাব বেড়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৬টি। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও সংখ্যা ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৮টি, নারী বিনিয়োগকারীর বিও সংখ্যা ৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৭৪টি। এছাড়া কোম্পানির বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৮টি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত অধ্যাপক খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রতি আস্থাহীনতা ও করোনার কারণে খাদের কিনারায় উপনিত হয় পুঁজিবাজার। সেখান থেকে বাজার চাঙা হয় ওষুধখাতের কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এবং একই গ্রুপের কোম্পানি বেক্সিমকো, স্কয়ার ফার্মা, লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্স, আইএফআইসি ব্যাংক এবং বিমাখাতের ৪৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াকে কেন্দ্র করে। আর তাতে মুনাফার আশায় নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএসইসির বেশ কিছু উদ্যোগের ফলে তলানিতে থাকা শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর তাতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। নতুন করে বিনিয়োগকারীরা বাজারে এসেছেন। তিনি বলেন, মানুষ যেখানে মুনাফা পাবেন সেখানেই বিনিয়োগ করবেন। এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আমাদের বাজারটাকে সেভাবে তৈরি করতে হবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজার ভালো থাকলে বিনিয়োগকারী আসবে, এটাই স্বাভাবিক। বাজার ভালো হচ্ছে তাই বিনিয়োগকারী বাজারে আসছে। বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখতে কমিশনকে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে হবে বলে জানান তিনি।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার মাসে সাড়ে ৩ লাখ বিও হিসাবের বেশির ভাগ খোলা হয়েছে আইপিওর শেয়ারে বিনিয়োগের লক্ষ্যে। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, রবির আইপিওকে কেন্দ্রে করে এক লাখের বেশি বিও হিসাব খোলা হয়েছে। কিছু মানুষ আছেন যারা আইপিওতে আবেদন করতেই ১০০, ৫০০ কিংবা হাজার বিও অ্যাকাউন্ট মেনটেইন করে থাকেন। এর বেশি কিছু না। তবে নতুন নতুন ফান্ড বাজারে আসায় কিছু বিনিয়োগকারী বাজারে এসেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আইপিওর শেয়ারের আবেদনের পাশাপাশি সেকেন্ডারি মার্কেটেও একটি শ্রেণী বিনিয়োগ করছে। ফলে পুঁজিবাজার দিন দিন চাঙা হচ্ছে। আশা করছি এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

এমআই/জেডএস