ফেব্রুয়ারি মাসে চাকরিপ্রত্যাশীদের অনশনের পরিপ্রেক্ষিতে এপ্রিলে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছিল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তবে এ মাসেও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে না।

এনটিআরসিএ বলছে, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কাজ চলমান রয়েছে। এ নিয়ে টেলিটকের সঙ্গে দফায় দফায় সভা করা হচ্ছে। আগামী জুন মাসে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চেষ্টা করা হবে। অন্যদিকে, ১৭তম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে স্থান সংকটের সমাধান না হওয়ায় আশার বাণী শোনাতে পারেনি এনটিআরসিএ।

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির বিষয়ে এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা টেলিটককে জানিয়ে দিয়েছি যে, এবার নিয়োগের শুনানিতে যাতে ভুলভ্রান্তি না হয়। সেজন্য আমরা তাদের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য বলেছি। তারা এটা তৈরি করছে। এর আগে এসব বিষয় নিয়ে তাদের সাথে আমাদের সভা হয়েছে। আজকেও আমরা অন্য একটি বিষয়ে সভা করব। আমাদের কাজের অগ্রগতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের কিছু আনুষঙ্গিক কাজ রয়ে গেছে। দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ, যোগ না দেওয়া শিক্ষকদের যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেবো। সেটা জুনের মধ্যেই হতে পারে।

জানা গেছে, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির দাবিতে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি, মানববন্ধন, অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনকারীরা। মানবেতর জীবনযাপন করেছেন উল্লেখ করে তারা দ্রুত চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।

এনটিআরসিএ থেকে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশের পর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে জানানো হলে তারা ঈদুল ফিতরের পরপরই বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশের দাবি জানান। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে আগামী ১৬ মে থেকে এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

এর আগে গত বছরের ৩০ মার্চ বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। পরে ৩৮ হাজার ২৮৩ জন প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন, যাদের ৩৪ হাজার ৭৩ জন নিয়োগ পেয়েছেন।

তবে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীদের অধিকাংশই ইনডেক্সধারী হওয়ায় এবং নারী কোটা ও অন্য ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ১৫ হাজার ৩২৫টি পদ ফাঁকা রয়ে যায়। ফলে শিক্ষক সংকট দূর করতে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। যার ফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

১৭তম নিবন্ধনে স্থান সংকট কাটেনি

১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজনের জন্য স্থানের সংকট একটি বড় সমস্যা বলে মনে করছে এনটিআরসিএ। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে আনার পাশাপাশি শিক্ষাবোর্ডগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগকারী এ সরকারি সংস্থা। সংকট কাটিয়ে আগামী জুন মাসের মধ্যেই এ পরীক্ষা নিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, ১৭তম নিবন্ধনের জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জায়গার সমস্যা। জায়গা না পাওয়ায় আমরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছি না। পরীক্ষার প্রশ্ন, রেজাল্ট তৈরির মেশিনসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র রাখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সঙ্গে কম্পিউটার সেন্টার নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সেখানে চারটা রুম আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারপরও স্থান সংকটের সমাধান হচ্ছে না। এজন্য ইতোমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থান সংকটের সমাধান হয়ে গেলে জুনের মধ্যেই হয়ত প্রিলিমিনারি টেস্ট নিতে পারব। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।

জানা যায়, এনটিআরসিএর পরীক্ষার জন্য সারাদেশে ১৯টি সেন্টার প্রয়োজন। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছেন ৫-৬ লাখ আবেদনকারী। ঢাকার বাইরে ১৮ জেলায় খুব বেশি পরীক্ষার্থী সমাগম হয় না। এক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করেন চার ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ এই পরীক্ষাটি সম্পন্ন হলেই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিতে কর্তৃপক্ষের বেশি সময় লাগবে না।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে প্রায় ১২ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। ওই বছরের ১৫ মে প্রিলি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়। তবে করোনার কারণে তখন পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসলেও পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে না। এদিকে, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা না হওয়ায় দুই বছর ধরে ঝুলে আছে ১২ লাখেরও বেশি প্রার্থীর ভাগ্য।
 
এএজে/এসকেডি