ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজধানীর ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের সাময়িক বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ।  

সোমবার (৬ জুন) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রতিবাদ জানান। এ সময় তার সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত অন্য দুই শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী ও তরুণ কুমার গাঙ্গুলীও উপস্থিত ছিলেন।

ভুয়া পিএইচডি অর্জন, আর্থিক দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার অধ্যক্ষকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ওই কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। শনিবার অধ্যক্ষ ও দুই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জসিম উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ, অযোগ্য ও সুবিধাভোগী শিক্ষক-কর্মচারী তাদের নিজ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এবং কলেজের সুনাম বিনষ্ট করে গণমাধ্যমে মিথ্যা ও বানোয়াট মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মনোনীত গভর্নিং বডির সম্মানিত সভাপতি মহোদয়ের দায়িত্বের সময়কাল নিয়েও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন।

তিনি বলেন, আমি অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজের আচরণবিধি ও শিষ্টাচার ভঙ্গকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের এসব কর্মকাণ্ড ও সংবাদ সম্মেলনের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কোনরূপ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রায় ৫৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী জোটবদ্ধ হয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রশাসনকে হেয়প্রতিপন্ন করে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়েছেন।

সাময়িক বহিষ্কারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট না পেয়েই কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারীর চাপের মুখে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ৪ জুন গভর্নিং বডির সভা চলাকালীন কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, বহিরাগত লোকজন ও কিছুসংখ্যক ছাত্রকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে ফেললে গভর্নিং বডি পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য আমাদের কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) না দিয়েই ২ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করে।

এ সময় অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষার্থীদের পোশাক কেনায় দুর্নীতি এবং অবৈধভাবে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের বিষয়ে ওঠা অভিযোগের ব্যাখ্যা দেন তিনি। নিজের পিএইচডি ডিগ্রির বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পর্যায়েই রয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, কলেজে চাকরি নেওয়ার সময় আমার পিএইচডি ডিগ্রি ছিল না। ২০২০ সালে আমেরিকান ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দূরশিক্ষণের (অনলাইন) মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের বিজ্ঞপ্তি বলে গবেষণা কর্মের সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. ড্যালি অ্যাপেন রাজু ও অধ্যাপক ড. মিগনোনমুরের অধীনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের পিএইচডি ডিগ্রির জন্য দুইটি সেমিনারে (অনলাইনে) প্রেজেন্টেশন হয়। একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, সনদ ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের কপি আমেরিকান ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে স্টুডেন্ট সার্ভিস প্যানেলে আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে দেখা যায়। যেহেতু দূরশিক্ষণের (অনলাইন) মাধ্যমে পিএইচডি ডিগ্রির কোর্স সম্পন্ন করেছি, তাই বিদেশ ভ্রমণ করার প্রয়োজন হয়নি। আমাদের পিএইচডি ডিগ্রির থিসিস পেপারের অংশ ইন্ডিয়ার দুইটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। এ ডিগ্রির জন্য কলেজ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পাইনি বা দাবি করিনি।

এএজে/আরএইচ