শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নারী নির্যাতনকারীর যেই পরিচয়ই থাকুক না কেন, তাকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। কেউ যদি তার বিশেষ রাজনৈতিক পরিচয়, গোষ্ঠীগত পরিচয় বা অন্য কোনো পরিচয় বা আশ্রয় নিয়ে নারী নির্যাতন বা সাম্প্রদায়িকতার কোনো ধরনের অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে, সেটি শেখ হাসিনার সরকার কখনোই হতে দেবে না।  

রোববার (২৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) উত্তরা ইউনিভার্সিটির ৭ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

আরও পড়ুন>> ছাত্রী হেনস্তা : চবির দুই শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে অপপ্রচার আছে, সেগুলোতে কেউ কান দেবেন না। আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে, যাতে সামনে কঠিন দিন  এলেও সমস্যায় না পড়ি। অর্থনৈতিকভাবে আমরা এখনও স্বস্তির জায়গায় আছি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় করোনা আমরা অসাধারণ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। উন্নত অনেক দেশই যা পারেনি। ইউরোপে যুদ্ধের কারণে বিশ্বে একটি মন্দা পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদের সাশ্রয়ী হতে বললেন, সেটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে। এজন্য আমরা সজাগ থাকব, কেউ যাতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে।

তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একইসঙ্গে আমাদের অন্যান্য দিকও দেখতে হবে। শিল্প বিপ্লব যখন আসে, তখন তার সঙ্গে একটি শোষণেরও সম্পর্ক থাকে। শোষণের মাধ্যমে ধনী দেশের সঙ্গে বৈষম্য যেন বেড়ে না যায়। আমাদের নিজেদেরকে তেমনভাবে তৈরি করতে হবে। যে বৈষম্য আছে, তা যেন আর না বাড়ে, বরং তাকে আমরা দূর করতে পারি। নতুন করে যেন কোনো বৈষম্য তৈরি না হয়।

মন্ত্রী বলেন, আজকাল সারা বিশ্বেই শিক্ষার্থীরা গ্যাপ ইয়ার নেয় এবং সেটাকে উৎসাহিত করা হয়। আমি কোনো একটি বিষয় নিয়ে পড়ছি, পড়ার মাঝখানে অন্য কোনো কাজ করতে চাইলাম, এটাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কেউ তিন বছর, কেউ বিশ বছর পরে পড়তে এসেছেন; একটি বিষয়ে পড়ে এসেছেন, আরেকটি বিষয়ে পড়তে চান, তিনি কেন এই সুযোগ পাবেন না! একজন মানুষ তার ১৭‌‌ বা ১৮ বছর বয়সে জানবেন যে, তিনি জীবনে সুনির্দিষ্টভাবে কি করতে চান এবং এটা ভিন্ন আর কিছুই করতে চান না; এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।

আরও পড়ুন>> ছাত্রী হেনস্তায় জড়িতদের আজীবন বহিষ্কার করা হবে : চবি উপাচার্য

দীপু মনি বলেন, আমাদের গড় আয়ু অনেক বেড়ে গেছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এটা আরও বাড়তে থাকবে। কাজেই আমি একটি বিষয় নিয়েই কি আটকে থাকব! এটা তো হওয়া উচিত নয়। আজকে আমি সাইকোলজি পড়লাম, কাল এনথ্রোপলজি এবং আরেকদিন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চাইতে পারি। কারিগরি শিক্ষায় যারা পড়ছেন, তারা খুব ভালো করছে চাকরির জগতে। কারণ কারিগরি নিয়ে পড়লে কেউ বেকার থাকে না। কাজ করতে করতে তার মনে হলো সে সাহিত্য পড়বে। কেন বাধা থাকবে! জ্ঞানার্জনে তো বাধা থাকা উচিত নয়। এই বাধাগুলো আমাদের দূর করতে হবে। এখন দেয়াল ভাঙবার সময়, দেয়াল তোলবার সময় নয়।

তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং চলছে। এর ফলাফল খুব আশাব্যঞ্জক। শিক্ষার্থীর আনন্দের মধ্য দিয়ে শিখবে। প্রশ্ন করবে। কিন্তু সমাজে প্রশ্ন করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। আমরা একদিকে সমাজে গণতন্ত্রের কথা বলি, অন্যদিকে শিশুদের শৈশব থেকে প্রশ্ন করাকে নিরুৎসাহিত করি। এজন্য আমাদের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনতে হবে।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও উত্তরা ইউনিভার্সিটির আচার্যে দেওয়া ক্ষমতাবলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। আরও বক্তব্য দেন উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আজিজুর রহমান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা লেখা। শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী।  

এএজে/জেডএস