আদালতের নির্দেশনায় দুই বছর বন্ধ ছিল শিক্ষক নিয়োগ

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জটিলতার নিরসন হচ্ছে। প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ থাকার পর মার্চ মাসে ৫৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে।

এর আগে শিক্ষক নিয়োগের বিভিন্ন আইনি দিক যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত মতামত ও সিদ্ধান্ত নিতে আগামী সপ্তাহের প্রথমদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আশরাফ উদ্দিন তার দপ্তরে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির জটিলতা কেটেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর আমরা এখন অন্যান্য আইনি দিক যাচাই-বাছাই করছি। এটি শেষপর্যায়ে আছে।’

তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির জটিলতা কেটেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর আমরা এখন অন্যান্য আইনি দিক যাচাই-বাছাই করছি। এটি শেষপর্যায়ে আছে

আশরাফ উদ্দিন, চেয়ারম্যান, এনটিআরসিএ

‘আগামী সপ্তাহের প্রথমদিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ামাত্র গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে’— বলেন আশরাফ উদ্দিন।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ করতে সরকারের তাগাদা রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগটা শেষ করতে।’

সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ করতে চায় সরকার

“এনটিআরসিএ’র মতামত পাওয়ার পর দ্রুত সময়ে সেটি নিষ্পত্তি করে পাঠানো হবে। আমরা চাই, মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সব শূন্য পদ পূরণ করতে। আশা করছি, এ বছরের মধ্যে বড় নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।”

সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ করতে সরকারের তাগাদা রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগটা শেষ করতে

মো. মাহবুব হোসেন, সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ

জানা গেছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে এনটিআরসিএ। সেজন্য আদালতের কিছু আদেশ আছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষ শূন্য ও প্রকৃত পদের বিপরীতে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। এছাড়া আবেদন প্রক্রিয়া কোন পদ্ধতিতে হবে, তার কর্মপরিকল্পনাও তৈরি করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে ৫৭ হাজারের কিছু বেশি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভুলের কারণে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগ না পাওয়া এক হাজার ২৮৪টি পদে আগের নিয়োগের ভুক্তভোগীদের নিয়োগে সুপারিশ করা হয়েছে। সে হিসাবে ৫৬ হাজারের মতো শূন্য পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতে পারে।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি শিক্ষক পদে নিয়োগের সুযোগ পেতে ১৩তম নিবন্ধনধারীরা রিট মামলা করেছিলেন। রিট করা দুই হাজার প্রার্থীকে আবেদনের সুযোগ দিতে আদালতের নির্দেশনা আছে। এছাড়া যাদের বয়স ৩৫ বছর হয়ে গেছে তাদের আবেদনের সুযোগের বিষয়েও নির্দেশনা দেন আদালত।

 গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এনটিআরসিএ’র সামনে প্রতীকী অনশন করেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে আন্দোলন করছেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কার্যালয়ের (এনটিআরসিএ) সামনে তারা প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেন।

বেসরকারি শিক্ষক পদে নিয়োগের সুযোগ পেতে ১৩তম নিবন্ধনধারীরা রিট মামলা করেছিলেন। রিট করা দুই হাজার প্রার্থীকে আবেদনের সুযোগ দিতে আদালতের নির্দেশনা আছে। এছাড়া যাদের বয়স ৩৫ বছর হয়ে গেছে তাদের আবেদনের সুযোগের বিষয়েও নির্দেশনা দেন আদালত

এ সময় তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১-১৫তম ব্যাচের নিবন্ধনধারীরা হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে এবং মাথায় সাদা কাপড় ও মুখে কালো ফিতা বেঁধে এনটিআরসিএ’র সামনে জড়ো হন।

নিয়োগপ্রত্যাশীরা জানান, সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫৭ হাজার শূন্য পদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অথচ নানা অজুহাতে শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে না। দ্রুত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার জন্য তারা প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছেন।

এনএম/এমএআর/