তীব্র জনবল সংকট নিয়ে চলছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) কার্যক্রম। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। যদিও বিষয়টি মানতে নারাজ কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, জনবল সংকট থাকলেও এর প্রভাব পড়ছে না বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে। কারণ একজন কর্মকর্তা ডাবল শিফটে কাজ করে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিচ্ছেন।

ইইডি সূত্রে জানা গেছে, ৭৫ শতাংশ শূন্য পদ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে ইইডির কার্যক্রম। এর মধ্যে দফতরের প্রধান প্রকৌশলী পদে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ পদে রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন প্রকৌশলী আরিফুর রহমান। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তাছাড়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদটিও শূন্য। সারাদেশে উন্নয়নমূলক কাজ তদারকি করতে যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন তার ৭৫ শতাংশই ফাঁকা।

ইইডির কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ‍শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগের কার্যক্রম চলমান। সরকারি কর্ম কমিশন ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জনবল নিয়োগ দিয়ে চলতি বছরের মধ্যে শূন্য পদ পূরণ হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে নির্বাচনি পুরস্কার হিসেবে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৬টি মাদরাসায় নতুন ভবন নির্মাণ ও ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ দেয় সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ৮০০ ভবনের নির্মাণকাজ একসঙ্গে চলছে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভবন নির্মাণ, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুনর্নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার, আসবাবপত্র সরবরাহ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ( ইইডি)। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে এসব কাজ শেষ করতে পারছে না দফতরটি।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সিস্টেম অ্যানালিস্ট থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পদটি শূন্য রয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী পদে (সিভিল) ৭২ জনের বিপরীতে আছেন মাত্র ৩২ জন। নেই কোনো আইন কর্মকর্তা, উপপরিচালক অর্থ পদটিও ফাঁকা।

অধিদফতরের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন পদে ৩ হাজার ১৭৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও কাজ করছেন মাত্র ৮১৪ জন। সে হিসেবে ২ হাজার ৩৬০টি পদ শূন্য (প্রায় ৭৫ শতাংশ)।

জানা গেছে, ইইডিতে প্রথম শ্রেণির ৪৩৩টি পদের মধ্যে শূন্য পদ ২৫৯টি। শতকরা ৬০ শতাংশ পদই ফাঁকা। এছাড়া পূরণকৃত পদ আছে ১৭৪টি। সরাসরি নিয়োগযোগ্য শূন্যপদ রয়েছে ১৭২টি এবং পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগযোগ্য শূন্যপদ আছে ৮৭টি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদ ছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ), সিস্টেম অ্যানালিস্ট, উপপ্রধান স্থপতি, নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ), নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক), উপপরিচালক (অর্থ), ঊর্ধ্বতন স্থপতি, সহকারী প্রধান স্থপতি, প্রোগ্রামার, আইন কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী যান্ত্রিক (যান্ত্রিক), সহকারী প্রকৌশলী মেইনটেন্যান্সসহ ২৩টি পদের মধ্যে ১৩টি পদে কোনো জনবল নেই।

দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা পদের ৭৫ শতাংশই ফাঁকা। নেই কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা, অ্যাস্টিমেটার ও উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক)। উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ৬৭৮টি পদের বিপরীতে শূন্য ৩৯৯টি। দ্বিতীয় শ্রেণির ৮৩৪টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৩০৪ জন।

তৃতীয় শ্রেণিতে জনবলের সংকট ৮৩ শতাংশ। অধিদফতরে তৃতীয় শ্রেণির ১ হাজার ১১৫টি পদের বিপরীতে শূন্য ৯৩৩টি। নেই কোনো ইলেকট্রিশিয়ান, স্টোরকিপার, কম্পিউটার অপারেটর ও সুপারভাইজার। এছাড়া ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ৫২৬টি পদের বিপরীতে শূন্য ৫২১টি।

চতুর্থ শ্রেণিতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে দুজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ থাকলেও সেই দুটি পদই শূন্য। অফিস সহায়কের ৬৯০টির মধ্যে ৬০৩টি পদ ফাঁকা রয়েছে। মোট ৭৯২টি পদের মধ্যে ৬৩৫টি পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন দায়িত্ব) আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনবলের ঘাটতি আছে, তবে কাজের স্থবিরতা নেই। কারণ আমরা এক হাতে দুইজনের কাজ করছি। কখনও ডাবল শিফটে কাজ করছি। শূন্য পদে নিয়োগ দিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুতই জনবল নিয়োগ দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করা হবে।

এনএম/এসকেডি/এমএমজে