বরাদ্দ না থাকায় চলতি অর্থবছরে (২০২০-২০২১) নতুন করে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হবে না। আগামী অর্থবছরের (২০২১-২০২২) বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ পেতে এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেন-দরবার শুরু করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সোমবার (২৯ মার্চ) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো-২০২১ জারি করা হয়।  যদিও নীতিমালা জারির পরপর এমপিওভুক্তির জন্য নতুন করে আবেদন গ্রহণ করা হবে বলে একাধিকবার বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বুধবার (৩১ মার্চ) নিজ দফতরে ঢাকা পোস্টকে বলেন, নীতিমালা জারি হলেও চলতি অর্থবছরে নতুন করে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হবে না। কারণ নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে হলে অর্থের প্রয়োজন, বর্তমানে সেই অর্থ নেই।  তবে এমপিওভুক্তির জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ চেয়ে দেন দরবার করছি। যদি অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেয় তবে নতুন করে এমপিওভুক্তি হবে।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনায় নতুন সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে। তবে এবারের নীতিমালায় এমপিওভুক্তিতে পাসের হার,পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমানো হয়েছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়, এমপিও পেতে হলে প্রতিষ্ঠানের নামে জমির হালনাগাদ খাজনাসহ নাম জারি থাকতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের নামে ও ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে না। শিক্ষকদের এমপিও নিষ্পত্তি নিয়ে অযথা হয়রানি করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়।

নীতিমালায় এমপিওভুক্তির আবেদনের বিষয়ে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হবে। নিজস্ব জমি ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে খতিয়ানভুক্ত ও নামজারিকৃত নিজস্ব জমিতে অবকাঠামো এবং হালনাগাদ একাডেমিক স্বীকৃতি বা অধিভুক্তি থাকলে এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে না। ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে কোনো প্রতিষ্ঠানও এমপিও করা হবে না। নেতিবাচক নামের কারণে সমাজে প্রভাব পড়তে পারে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত করা হবে না।

কবে থেকে আবেদন শুরু হবে জানতে চাইলে নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠানের জমি, অবকাঠামোসহ বেশ কিছ নতুন শর্ত নীতিমালায় যুক্ত করা হয়েছে। যে কারণে আগের সফটওয়্যারে আবেদন নেওয়া সম্ভব হবে না। আবেদন নিতে হলে নতুন সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্বান্তের পর এ কার্যক্রম শুরু হবে।

নীতিমালায় বলা হয়, ১০০ নম্বরের গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হবে। ২০১৮ সালের নীতিমালায় থাকা একাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর তুলে দেওয়া হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার ২৫ নম্বরের স্থলে ৪০ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ নম্বর, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে সর্বশেষ তিন বছরের সংশ্লিষ্ট স্তরের গড় শিক্ষার্থী, তিন বছরের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং তিন বছরের পাসের হারে প্রাপ্ত নম্বরের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত করা হবে। কাঙ্ক্ষিত সংখ্যার চেয়ে কম হলে শূন্য নম্বর পাবে।

নীতিমালায় এমপিওভুক্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সামঞ্জস্য রক্ষা করার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলার জনসংখ্যা, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও প্রতিষ্ঠানের ধরন বিবেচনা করা হবে। শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়, হাওড়-বাওড়,চরাঞ্চল, ছিটমহল, বস্তি, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী (প্রতিবন্ধী, হরিজন, সেবক,চা বাগান, তৃতীয় লিঙ্গ) এবং বিশেষয়াতি চারুকলা, বিকেএসসি, সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিল করা হবে।

এনএম/এসকেডি