করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সবকিছুতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ঈদের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রতিষ্ঠান খোলার আগে দেশের সব শিক্ষক-কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার কথা ছিল। টিকার অভাবে সেটি এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার উপায় নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, সারাদেশের সব শিক্ষক, কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করে আগামী ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ভারত টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে টিকা সংকটে পড়েছে দেশ। বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু মে মাসের মধ্যে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না থাকায় তাদের টিকার আওতায় আনা যাচ্ছে না। আর করোনা সংক্রমণ সহসাই থামছে না বলে বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনার পরিস্থিতি কেমন, তা তো সবাই দেখছেন। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কী করা যাবে তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। করোনার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেব।’

করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত আর খোলা হয়নি। সবশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ঈদের পরে আগামী ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এটি সামাল দিতে সরকার সারাদেশে বিধিনিষেধের নামে এক প্রকার লকডাউন দিয়ে আসছে গত ৫ এপ্রিল থেকে। যা আগামী ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরপর এ বিধিনিষেধ আরও বাড়তে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করলে বা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হলে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দৈনিক করোনা সংক্রমণ বর্তমান সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এপিডেমিওলজিক্যাল প্রজেকশন মডেলিংয়ের ওপর ভিত্তি করে এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন তারা। এই কনসোর্টিয়াম গঠিত হয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকসহ ৪০টি দেশের সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক মডেলারস ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে।

তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ কমছে এর ধারা আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে ঈদে মানুষের চলাচল বেড়ে গেলে পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।

কোভিড-১৯ ইন্টারন্যাশনাল মডেলিং কনসোর্টিয়ামের সদস্য শাফিউন শিমুল বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণের হার কমছে। চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণের এই হার একই রকম থাকবে। তবে ঈদে চলাচল বাড়বে, ফলে সংক্রমণের হার আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।’

বিশেষজ্ঞদের তথ্যানুযায়ী, ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হচ্ছে না। কবে খুলবে তাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। সবকিছুই পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। 

টিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশই টিকা নিয়েছেন। যারা বাকি আছেন, তাদের বিষয়ে সরকার কনসার্ন (মনযোগী)। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিতে কোনো সমস্যার হওয়ার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর সবাইকে টিকা দিতে পারিনি। কারণ সবার এনআইডি নেই। কতজন শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে সে তথ্য আমার কাছে এই মুহূর্তে নেই।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অফিসিয়ালি আমাদের জানায়নি। তবে শুরু করেছে জেনেছি। পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিকা দিচ্ছে। সরকার শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেবে। ৯০ শতাংশ শিক্ষককে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শেষ হয়েছে বলে জেনেছি।’

দেশে করোনার সবশেষ পরিস্থিতি

মঙ্গলবারের তথ্যমতে, দেশে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে  ১১ হাজার ২২৮ জনের। একদিনে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩১ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ লাখ ৫১ হাজার ৬৫৯ জনে।

এনএম/এফআর/জেএস