শেষ দিনে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন উপাচার্য আবদুস সোবহান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য সাবেক উপাচার্য ড. এম আব্দুস সোবহানের শেষ কর্মদিবসে প্রায় ১৪১ জনের নিয়োগ অবৈধ বিবেচিত হওয়ায় এসব নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এর আগে আব্দুস সোবহানের মেয়ে ও জামাতাসহ নিয়োগ পাওয়া আরও ৩৪ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে এসব নিয়োগে যুক্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি অভিযুক্তরা যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। 

রোববার (২৩ মে) তদন্ত কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর মো. আলমগীরসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।  

তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করলেও পরবর্তীতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর মো. আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরো নিয়োগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের সংবিধান ২৯/এ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। একটি চাকরি নিয়োগে সবার অংশগ্রহণ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হলেও এ নিয়োগে প্রত্যেকটি বিষয় এখানে মানা হয়নি। তাই পুরো নিয়োগটি অবৈধ।

যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেখানে নিয়োগটি অবৈধ সেখানে তারা কীভাবে যোগদান করবেন। তাদের যোগদানপত্রই কেউ দেবে না। তারা যদি কোর্টেও যায় তাহলেও টিকবে না। কারণ নিয়োগই অবৈধ প্রক্রিয়ায় হয়েছে, যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

জানা গেছে, রোববার দুপুরে এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, সারসংক্ষেপে তৈরি করে শিক্ষামন্ত্রীর অনুমতিক্রমে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। সেখানে সম্মতি মিললে সাবেক উপাচার্য ড. এম আব্দুস সোবহানের বিদেশযাত্রা বন্ধসহ তদন্ত কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হবে। তবে এখনই যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক অভিযোগ বিবরণী দেওয়া হবে।

জানা গেছে, গত ৬ মে ড. এম আব্দুস সোবহান তার দ্বিতীয় মেয়াদে শেষ কর্মদিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে প্রায় ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে যান। এ নিয়োগ স্থগিত রাখতে তাকে চিঠি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারপরও বিশাল এ নিয়োগে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি তদন্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি সরেজমিনে ‍উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন। কমিটিকে তিনি জানান, মানবিক কারণে তিনি এ অবৈধ নিয়োগ দিয়েছেন।

তদন্ত কমিটি এ অবৈধ নিয়োগের জন্য প্রধান ব্যক্তি হিসেবে দায়ী করেছেন ড. এম আব্দুস সোবহানকে। এ ঘটনায় তার জামাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রভাষক এটিএম শাহেদ পারভেজকে প্রধান সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এছাড়া সংস্থাপন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, রেজিস্ট্রার শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম ও পরিষদ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদকে সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অপরাধের ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

জানা গেছে, ড. সোবহানের অন্য একটি দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে, তাই তার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে। সর্বোপরি কমিটি তার এখতিয়ার ও আইন অনুযায়ী সুপারিশ রেখেছে। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়।

সিভি ছাড়াই নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য সোবহান

অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের মেয়াদের শেষ দিনে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে মাত্র নয়জনের সিভি পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি। তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র তদন্ত কমিটি নিয়ে গেছে। বাকিদের সিভি বা কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।

গত ১৫ মে তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, প্রশাসনিক কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বন্ধ রেখেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারপরও গত ৫ মে কাগজপত্র প্রস্তুত করে পরদিনই ৬ মে সবাইকে নিয়োগ দিয়ে দেন উপাচার্য সোবহান। আমরা ১৩৮ জনের তালিকা পেয়েছি। এর মধ্যে মাত্র নয়জনের সিভি আছে। বাকিদের নেই। এর মানে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা উপাচার্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তিনি অনেক বিষয়ের উত্তর দিতে পারেননি। অনিয়মের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

এনএম/ওএফ/জেএস