জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, দেশের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাড়াতে ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৩৩ বছর চলে গেলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে কাঙ্ক্ষিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত বিশেষ সিনেট অধিবেশনে সিনেট চেয়ারম্যানের অভিভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রফেসর আমানুল্লাহ বলেন, একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে দেশের সর্ববৃহৎ ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব একসিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। কারণ দেশের উচ্চশিক্ষার শতকরা ৭০ ভাগ প্রদান করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। সারাদেশের প্রায় আড়াই হাজার সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও প্রফেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলে দেশে পরিবর্তনের যে সুযোগ এসেছে তার সদ্ব্যবহার করে বর্তমান প্রশাসন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে দেশের উচ্চশিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

উপাচার্য জানান, শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে তথ্য প্রযুক্তি ও একাধিক ভাষায় প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে স্নাতক, স্নাতক-সম্মান ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির সিলেবাস সংস্কার এবং আইসিটি ও ইংরেজি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে এআই ও ডেটা সায়েন্সের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে প্রথম পর্যায়ে ৫০ হাজার ছাত্রীকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ পাবে ছাত্ররা। এজন্য দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, অধিভুক্ত কলেজে ক্যারিয়ার ক্লাব গঠন এবং বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও ল্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশেষ সিনেট অধিবেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান ও প্রফেসর ড. মো. নূরুল ইসলাম, ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ টি এম জাফরুল আযম, ৫৪ জন সিনেট সদস্য এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক ও বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন। 

এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম তালুকদার, ঢাকার হজরত শাহ আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ রানা ফেরদৌস রত্না এবং সিলেটের রাগীব রাবেয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. এনামুল হক।

আরএইচটি/জেডএস