৫৪৩ দিন পর স্কুল খোলার আনন্দে গত রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা মানহা। একটু পরপর ঘুম থেকে জেগে তার মাকে প্রশ্ন করেছে- মা, কখন স্কুলে যাব?

রোববার সকালে মানহা যখন স্কুলের সামনে আসে মা আর দাদাকে সঙ্গে নিয়ে তখনো স্কুলের ক্লাস শুরু হতে আরও বেশ সময় বাকি। এই ফাঁকে মা মেয়ে আর দাদা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সেলফি তুলতে। এছাড়া দাদার সঙ্গে দাঁড় করিয়ে মা জিনাত লায়লাও একের পর এক ছবি তুলছিলেন মেয়ের প্রথম স্কুলের স্মৃতি ধরে রাখতে।

মানহার মতো শত শত ক্ষুদে শিক্ষার্থী অপেক্ষায় ছিল আজকের দিনটার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত সেই দিন আজ এসেছে, ঘরে বন্দি শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্কুলের আঙিনায় ফিরতে পেরেছে তারা। 

মানহার মা জিনাত লায়লা বলেন, আজ প্রথম স্কুল খুলবে এটা নিয়ে আমার মেয়ে বেশ এক্সাইটেড ছিল, সারা রাত ঠিক মতো ঘুমায়নি। একটু পরপর জেগে উঠে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে- মা, কখন স্কুলে যাব? সে খুব আনন্দিত। 

এত দিন পর স্কুল খোলায় অভিভাবকদের মাঝেও কাজ করছে ভালোলাগার অন্যরকম অনুভূতি। 

একই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নওশিন তাবাসসুম অহনা বলেন, অনলাইনে ক্লাস করতে করতে সশরীরে ক্লাস করার অনুভূতি ভুলেই গিয়েছিলাম। আজ অনেক দিন পর ক্লাস করতে এসেছি, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে, ক্লাস রুমে বসে ক্লাস করব। সব মিলিয়ে অনূভূতিটাই অন্য রকম।

স্কুল গেটে দেখা গেল বড় একটি ব্যানার টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে লেখা- এসো মিলি প্রাণের স্পন্দনে, ভালোবাসার শিক্ষাঙ্গনে। এদিকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে দিচ্ছেন। আর অভিভাবকদের অনুরোধ জানিয়ে বলছেন, আপনারা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখুন। 

রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে মেয়েকে বসুন্ধরার ভিকারুননিসা স্কুলে এনেছেন মা শাহনাজ পারভিন। তিনি বলেন, এত দিন পর স্কুল খুলল। স্কুল খোলায় বাচ্চারা এত খুশি যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। শিক্ষকরাও স্বাগত জানিয়েছেন তাদের শিক্ষার্থীদের।  

এদিকে স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে আরও অনেক কিছু। ফিরে এসেছে করোনা-পূর্ববর্তী দিনগুলোর দৃশ্যপট। স্কুল গেটের পাশেই রিকশা চালকরা আগের দিনগুলোর মতো ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্কুল গেটের একটু দূর দিয়ে ঘুরছে ভ্রামম্যাণ ভেলপুরি, ফুচকা। চটপটির দোকানিদের মাঝেও ফিরে এসেছে আগের উচ্ছ্বাস। 

বসুন্ধরা গেটে কথা হয় ভ্রাম্যমাণ ভেলপুরি বিক্রেতা সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় যখন ছুটির পর শিক্ষার্থীরা ফিরত তখন অনেক বেচা-বিক্রি হতো। মাঝখানে স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসা ঠিক মতো হতো না। আজ স্কুল খোলায় মনে হচ্ছে ব্যবসার প্রাণ ফিরে পেয়েছি। স্কুল খুলে দেওয়ায় আমরাও খুব উপকৃত হয়েছি।

করোনার ছোবলে ৫৪৩ দিন আগে গত বছর ১৭ মার্চ সরকার দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল। এরপর এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত একাধিকবার শ্রেণি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সংক্রমণের দাপটে তা আর হয়ে ওঠেনি। 

এএসএস/এনএফ/জেএস