করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। জেএসসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় ফলাফলের ভিত্তিতে বিশেষ মূল্যায়ন করে ফলাফল দেওয়া হয়েছে। এতে শতভাগ পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি। তারপরও ফলে সন্তুষ্ট নয় প্রায় ১৫ হাজার ৭২৭ জন শিক্ষার্থী। তারা ফল পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের রিভিউ আবেদন করেছেন।

রিভিউ আবেদনের শীর্ষে রয়েছে ঢাকা শিক্ষা র্বোড। এ বোর্ডে আবেদনের সংখ্যা ৪ হাজার ১১৫ জন। প্রতি বছর পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী আবেদন করলেও এবার এ সংখ্যা তুলনামূলক কম। আর ফল পরর্বিতন হওয়ার সম্ভাবনা অনকেটা কম বলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি। তবে রিভিউ করা শিক্ষার্থীদের ফল কবে প্রকাশ করা হবে তা এখনো জানানো হয়নি।

বোর্ডগুলোর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বরিশাল বোর্ডে ৬৪২ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে এক হাজার ৮৮৫ জন, কুমিল্লা বোর্ডে এক হাজার ২৭ জন, ঢাকা বোর্ডে চার হাজার ১১৫ জন, দিনাজপুর বোর্ডে এক হাজার ২২৭ জন, যশোর বোর্ডে এক হাজার ৬৯৪ জন, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৯১৬ জন, রাজশাহী বোর্ডে এক হাজার ৯২২ জন, সিলেট বোর্ডে ৯৪৭ জন, কারিগরি বোর্ডে ৫৩৫ জন, মাদরাসা বোর্ডে ৫১৭ জন। ১১ শিক্ষা বোর্ডে মোট ১৫ হাজার ৭২৭ জন পরীক্ষার্থী ফল চ্যালঞ্জে করে আবদেন করেছে।     

শিক্ষা বোর্ডের র্কমর্কতারা বলছেন, জেএসসি এবং এসএসসি ও সমমানরে পরীক্ষার বিষয় ‘ম্যাপিং’(বিষয়ভিত্তিক নম্বর গণনা) করে ফল তৈরির কারণে ৩৯৬ জন পরীর্ক্ষাথী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি। কিন্তু আগের দুই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেয়েও ১৭ হাজাররে বেশি শিক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

গত ৩০ জানুয়ারি এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয়। পরের দিন ৩১ জানুয়ারি থেকে ফল রিভিউ করার সুযোগ দেয় শিক্ষা বোর্ডগুলো। শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল আবেদন করার সুযোগ।

শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত দশটা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, ফল রিভিউ করেছেন মোট ১৪ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি। বোর্ডভিত্তিক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ফোন রিভিউয়ের আবেদনে সবচেয়ে বেশি। তবে রিভিউ করা শিক্ষার্থীদের ফল কবে প্রকাশ করা হবে তা এখনো জানানো হয়নি।

এদিকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি ৩৯৬ জন শিক্ষার্থী। এ শিক্ষার্থীরা কেন জিপিএ পাননি তার ব্যাখ্যা লিখিতভাবে দেবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর। যারা বোর্ডের আবেদন করেছে তাদেরকে লিখিতভাবে জানানো হচ্ছে।

বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, শনিবার (৩০ জানুয়ারি) এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর থেকেই বোর্ডে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় বেড়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন প্রচুর ফোন আসছে বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে।  সবাই তার সন্তান কেন জিপিএ-৫ বা কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি তার ব্যাখ্যা চাচ্ছে। বিশেষ করে ৩৯৬ জন শিক্ষার্থী যারা জিপিএ-৫ পায়নি তারা বেশি ফোন ও বোর্ডে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। 

৩০ জানুয়ারি প্রকাশিত এইচএসসির ফলে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাননি এমন ১৭ হাজার ৪৩ জন শিক্ষার্থী এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। অন্যদিকে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ছিল কিন্তু এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি ৩৯৬ জন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল তৈরির জন্য সাবজেক্ট ম্যাপিং করায় জেএসসি ও সমমান এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এবার ৩৯৬ জন জিপিএ-৫ পায়নি।

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২০ ফলাফল প্রণয়নে জেএসসি বা জেডিসি ও এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার বিষয় ম্যাপিং পদ্ধতি সম্পর্কে ফলাফলের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে- সাধারণভাবে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ৭৫ শতাংশ বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিবেচনায় নিয়ে এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, জেএসসি বা জেডিসি পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসির আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে এইচএসসিতে আবশ্যিক এই তিন বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞান গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমানের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি বা সমমানের পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনায় নিয়ে যথাক্রমে এইচএসসির পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমানের পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার গ্রুপ ভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে পাওয়া গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসির গ্রুপভিত্তিক পরপর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফলের পরিসংখ্যানে আরও বলা হয়, গ্রুপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশের সঙ্গে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পরপর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছরের ১ এপ্রিল শুরু হওয়ার কথা ছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল এই পরীক্ষায়। তবে, করোনা মহামারির কারণে এই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ঘোষণা করা হয় ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল। এতে সবাই পাস করেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পেয়ে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় আট হাজার ৫৭০ জন। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল চার হাজার ১৫৭ জন।

এনএম/ওএফ