সুরের মুর্ছনায় তিনি যেমন ভাসাতে জানেন, আবার সাবলীল অভিনয়ে ছড়াতে পারেন মুগ্ধতা। তিনি পার্থ বড়ুয়া। দেশের ব্যান্ড মিউজিকের অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব। পাশাপাশি অভিনয় করেছেন বহু নন্দিত নাটকে। বর্তমান সময়ের ওয়েব কনটেন্টেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে নিয়মিত। গান-অভিনয়ের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ঢাকা পোস্ট-এর সঙ্গে। লিখেছেন কামরুল ইসলাম  

গান এবং অভিনয় দুই ভুবনেই সাফল্য অর্জনের রহস্য কী?

কপাল আর কি! আমি তো আসলে পেশাদার সংগীতশিল্পী। সেক্ষেত্রে যতটুকু পেরেছি, মিউজিকে সময় দিয়েছি। আর অভিনয়ের ব্যাপারটা হলো যে, এই জায়গাটার প্রতি একটা ভালোবাসা আছে। বন্ধু-বান্ধবদের অনেকেই কাজ করেন এখানে। তাই হাতে সময় থাকলে অভিনয় করি। যেমন করোনা আসার পর থেকে অনেকটা সময় পেয়েছি; সেজন্য বেশ কয়েকটা কনটেন্টে অভিনয় করতে পেরেছি। আমার জায়গা থেকে আমি চেষ্টা করেছি ভালো করার। তবে ভালো-মন্দের বিবেচনা দর্শকদের কাছে।

ওয়েব কনটেন্টে আপনি নিয়মিত কাজ করছেন। এই মাধ্যমটা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কেমন?

টেলিভিশন নাটকের বর্তমান অবস্থার জন্য আমরা সবাই দায়ী। চ্যানেলগুলো যেমন দায়ী, আমরা আর্টিস্টরাও দায়ী। যেকোনো জিনিসের একটা নির্দিষ্ট মান বা স্ট্যান্ডার্ড থাকা উচিৎ। মানুষের কাছে তো এখন অনেক অপশন। আগে যেমন শুধু বিটিভি ছিল। কোনো কাজ ভালো হোক বা খারাপ, মানুষ সেটাই দেখতো। কারণ অপশন ছিল না। কিন্তু এখন আমাদের এতগুলো টিভি চ্যানেল। মানুষ চাইলেই এখন যেকোনো কিছু দেখতে পারে। কনটেন্ট ভালো না হলে মানুষ দেখবে কেন। দর্শকরা তো আর বোকা নন। আমার যেটা ভালো লাগবে না, সেটা আমি দেখব কেন। আবার ভালো লাগতে হলে সেই মানটা আমরা রাখছি কোথায়? কোনো ঈদে তিন’শ নাটক হলে ত্রিশটা নাটক ভালো কিনা সন্দেহ! কারণ এখন চিত্রনাট্য নিয়ে কারোর মাথাব্যথা নেই। কিছু পরিচিত মুখ আছে, তাদের নিয়ে যেকোনোভাবে একটা কাজ করে ফেললেই হলো! কোনো প্রি-প্রোডাকশন নেই, প্রস্তুতি নেই। এভাবে কাজ করলে তো মান কমবেই। আর মান কমলে স্বভাবতই মানুষ এটা দেখবে না। সবমিলিয়ে আমরাই আমাদের তেরোটা বাজিয়েছি। ওয়েব কনটেন্ট আসার পর সেগুলো কিন্তু একটা ভালো বাজেটে নির্মিত হচ্ছে। যারা নির্মাণ করছেন, তারা ভালো গল্পের দিকে জোর দিচ্ছেন। প্রযোজকরাও গল্প-চিত্রনাট্যের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। যেমন ‘তকদীর’-এর যে গল্পটা, এটা নিয়ে কোনো টিভি চ্যানেলের কাছে গেলে তো তারা নেবেই না। তারা বলবে, এখানে নায়িকা কোথায়, গান কোথায়! এই সমস্ত দিক বিবেচনা করলে ওয়েব কনটেন্ট একটা মান ধরে রাখছে। এবং সেগুলো দর্শকরা দেখছে। আমি মনে করি, ওয়েব কনটেন্টের এই গতি এবং মান ধরে রাখতে পারলে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাবে।

আগে প্রায়শই টিভি নাটকে কাজ করতেন। এখন করেন না কেন?

প্রথম কারণ হলো আমি তো পেশাদার অভিনয়শিল্পী না। আমার পক্ষে নিয়মিত কাজ করা সম্ভব নয়। কারণ এত সময় আমার হাতে নেই। এখন হাতে সময় আছে বিধায় কিছু কাজ করছি। আর আরেকটা কারণ হলো, ভালো কনটেন্ট না হলে ওই কাজ আমি করতে চাই না।   

গানের মানুষ হয়ে অভিনয়ে আসাটা কীভাবে?

ওই যে বললাম, নাটকে বন্ধু-বান্ধবরা কাজ করে। তাদের বলাবলিতেই অভিনয় করা। প্রথম কাজটা ছিল মেজবাউল হক সুমনের। ও আমাকে ডেকে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল ক্যামেরার সামনে। আমি বললাম, পারবো না। কিন্তু ও বলল, পারবেন। এভাবেই শুরুটা হয় আরকি। এরপর ধীরে ধীরে অন্যদের কাজও করা হলো।

গান নিয়ে আপনার সংগীতায়োজনে একাধিক অনুষ্ঠান সফল হয়েছে। কাজগুলোর অভিজ্ঞতা কেমন?

এ প্রসঙ্গে প্রথমেই আমি পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ একটা ইউটিউব অনুষ্ঠানের জন্য এরকম বাজেট দেওয়া বা আমার ওপর বিশ্বাস রাখা; এটাই বিশাল ব্যাপার। কোনো কাজ করতে গেলে মিনিমাম একটা বাজেট লাগে। এখন তারা তো আগে থেকে জানেন না, কাজটা আসলে কেমন হবে। তবুও বিশ্বাস রেখেছেন, সেজন্য তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আর আমরা নিজেরাও চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চটা দেওয়ার। শেষ পর্যন্ত একটা জিনিস কিন্তু দাঁড়িয়েছে। এই কাজগুলো করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি, আমাদের দেশে কাজ করার মতো যথেষ্ঠ ম্যাটেরিয়াল আছে। কণ্ঠশিল্পী আছে, মিউজিশিয়ান আছে, আমরা চাইলেই পারি ভালো একটা কিছু করতে। এই বিশ্বাসটা আমার আছে।

নিজে গান করছেন না কেন?

গান করছি না বললে ভুল হবে। করছি, তবে সেগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে না। কারণ গানগুলো যে ছাড়ব, সেই সঠিক জায়গাটা কোথায়! যেমন ইউটিউব রাইটস বিষয়ক কিছু জটিলতা তো আছে। তাছাড়া এখন পরিস্থিতিও অনুকূলে নেই।

আপনাদের ব্যান্ডের কী অবস্থা এখন?

সব ঠিকঠাক। আমাদের ব্যান্ডে তো কোনো সমস্যা নেই। করোনার কারণে একটু গ্যাপ আছে। এই সংকট কেটে গেলেই পুরোদমে কাজ চলবে।

নতুন যেসব ব্যান্ড এসেছে, তাদের গান কেমন লাগে?

তারা চমৎকার কাজ করছে। বেশ কিছু ব্যান্ড অত্যন্ত ভালো মানের গান করছে। এমনকি আমাদের চেয়েও কিছু ক্ষেত্রে তাদের কাজ ভালো। নিয়মিতই কিন্তু গান হচ্ছে। তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে দেখা যাবে কোন গান টিকে আছে, বা কোন গানটির মান কেমন। সময়ই এটা নির্ধারণ করে দেবে।

কেআই/আরআইজে