বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের উত্থানে যে’কজন মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন, তাদেরই একজন আইয়ুব বাচ্চু। গিটারের জাদুকর খ্যাত এই রকস্টার সত্তর দশকের শেষ দিক থেকে এই একবিংশ শতাব্দীর শূন্য দশক অব্দি সংগীতে মিশে ছিলেন। তিনি যেভাবে বাংলার প্রতিটি প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন, তা সত্যিই এক বিস্ময়!

আজ ১৬ আগস্ট কিংবদন্তি এই শিল্পীর জন্মদিন। তিনি নেই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া গান আর সহকর্মীদের প্রতি ভালোবাসা রয়ে গেছে ঠিকই। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে তরুণদের বরাবরই সুযোগ করে দিয়েছিলেন ছয় তারের জাদুকর। এজন্য অনেকেই তার কাছে ঋণী।

তেমনই একজন ব্যান্ড তারকা পার্থ বড়ুয়া। আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরেই ব্যান্ড মিউজিকে পথচলা শুরু হয়েছিল তার। তাই প্রিয় অভিভাবকের না থাকা তাকে অনেক বেশিই কষ্ট দেয়। ঢাকা পোস্ট-এর কাছে পার্থ বড়ুয়া বলেন, “আমি তো গিটার শিখেছি তার কাছ থেকে। বড় ভাই বা অভিভাবক যাই বলি না কেন, তিনি আমাকে সংগীতে পথ চলতে শিখিয়েছেন। ইনফ্যাক্ট আমাকে ঢাকায় তিনিই নিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন, ‘থাক, কাজ কর এখানে’।”

আইয়ুব বাচ্চুর না থাকা একটা বিরাট শূন্যতা তৈরি করে দিয়েছে পুরো সংগীতাঙ্গনেই। সে বিষয়টি উল্লেখ করে পার্থ বলেন, ‘একজন গিটারিস্ট হিসেবে বাদই দিলাম, তিনি তো অসাধারণ একজন মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন। অনেকগুলো ভালো ভালো গান সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি থাকলে আরও কিছু সুন্দর গান হতো। ওই গানগুলো থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। আমার মিউজিক কিংবা ব্যক্তিগত জীবনের ভালো-মন্দ যেকোনো পরামর্শ তার কাছ থেকেই নিতাম। সেই মানুষটা তো আর নেই। এই জায়গাটায় বিরাট একটা শূন্যতা আছে।’

আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কোনো স্মৃতির ব্যাপারে জানতে চাইলে পার্থ বড়ুয়া বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার এত স্মৃতি, এত কথা, কখনো বলে শেষ করা যাবে না। এটুকুই বলতে পারি, তার চলে যাওয়াটা আসলে একদমই অপ্রত্যাশিত ছিল।’

শেষ জীবনে এসে দেশের ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর কিছু আক্ষেপ ছিল। এমনকি নিজের মূল্যবান গিটার বিক্রি করে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। রাষ্ট্রীয় আয়োজনে দেশের ব্যান্ড শিল্পীদের যথেষ্ঠ মর্যাদা দেওয়া হয় না বিধায় তার দুঃখ ছিল। ওই বিষয়টির সূত্র ধরে পার্থ বড়ুয়া বললেন, ‘ব্যান্ড মিউজিকের প্রতি আমাদের দেশে একটা অবজ্ঞা আছে। অথচ যখনই কোনো প্রয়োজন পড়ে, কারো জন্য তহবিল গঠন কিংবা কোনো চ্যারিটি কনসার্ট হলে কিন্তু আমাদের ব্যান্ডের লোকজনই এগিয়ে আসে। সে হিসেবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই সেক্টরকে কখনোই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আমাদেরকে সেভাবে কখনো মূল্যায়ন করা হয়নি, আর হবে বলেও আশা করি না। এসব আক্ষেপ কেবল বাচ্চু ভাইয়ের না, আমাদের ব্যান্ড মিউজিকের সবারই আছে।’

কেআই/আরআইজে