জিয়াউল হক পলাশ; বাইরের যে অবয়ব, যাকে সবাই দেখেন, তিনি অভিনেতা। এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা। কিন্তু তার ভেতরের যে সত্তা, যা দেখা যায় না, সেখানে পলাশ একজন শিল্পমনা মানুষ, নির্মাতা। তার চোখের ব্যালকনিতে খেলা করে নির্মাণের স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকেই এই স্বপ্ন ক্রমশ বেড়ে উঠেছে।

শোবিজে পলাশের পদচারণাও শুরু হয়েছিল ক্যামেরার পেছনের মানুষ হিসেবে। এরই মধ্যে নির্মাতা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন একাধিক নাটক, বিজ্ঞাপন ও মিউজিক ভিডিও। প্রতিটি নির্মাণে পলাশ গল্পকে প্রাধান্য দিয়েছেন। চেষ্টা করেছেন নিজস্বতার ছাপ রাখতে।

সম্প্রতি প্রচারে এসেছে তার নির্মিত নতুন বিজ্ঞাপনচিত্র। যেটি পলাশ বানিয়েছেন ইডব্লিউ ভিলা মেডিকা’র জন্য। বিজ্ঞাপনে সাধারণত পণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে চটক দৃশ্য-সংলাপের ছড়াছড়ি দেখা যায়। কিন্তু পলাশ নিজের দর্শনে অনড়। তাই এখানেও বললেন গল্প। সে গল্প মনের, মানসিক দুনিয়ার।

ঢাকা পোস্ট-এর কাছে পলাশ শুনিয়েছেন বিজ্ঞাপনচিত্রটির পেছনের ঘটনা। বললেন, ‘বাংলাদেশে স্কিন কেয়ারের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের প্রচারণাও আমরা লক্ষ্য করি। ইডব্লিউ ভিলা মেডিকার চিন্তা-ভাবনাও ছিল ওরকম। স্কিনের ব্রণ, স্কিন কালো এসব দূর করার বিষয়গুলো তুলে ধরা। কিন্তু একজন নির্মাতা হিসেবে আমি এভাবে ভাবিনি। আমি ভেবেছি, মানুষের মনের দিকটা। এসব শারীরিক সমস্যার কারণে মানুষের মনের ভেতর একটা রোগ তৈরি হয়, একটা হীনমন্যতা চলে আসে; সেটাকে দূর করা অনেক বেশি জরুরি। তাই আমার মূল ফোকাসটা বাহ্যিক দিকে নয়, মনের দিকে ছিল। সেটাই বিজ্ঞাপনে ফুটিয়ে তুলেছি।’

প্রচারে আসার পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন? প্রশ্নটা রাখতেই পলাশ বললেন, ‘সত্যি বলতে এটা অনএয়ার হওয়ার পর বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের কাছ থেকে ফোন পেয়েছি। আউট অব দ্য বক্স চিন্তার জন্য তারা প্রশংসা করেছেন। তারা বলছেন, অনেক দিন পর বিজ্ঞাপনে একটা গল্প দেখেছেন। আর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া তো নিয়মিতই পাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন হলেও সেটাতে গল্পের অস্তিত্ব রাখতে চান পলাশ। তার ভাষ্য, ‘এটা আমার তৃতীয় বিজ্ঞাপনচিত্র। সামনে আরও অনেক কাজ করব। তবে বিজ্ঞাপনেও যে গল্প বলা যায়, এই চর্চাটা আমি ধরে রাখব। কারণ আমাদের বিজ্ঞাপনগুলো কেমন যেন পণ্যনির্ভর হয়ে গেছে। একটা সীমাবদ্ধতার ভেতরে চলে এসেছে। আমি সেই গণ্ডিতে আবদ্ধ হতে চাই না। সিনেমা, নাটকে যেমন গল্প থাকে, বিজ্ঞাপনেও গল্প থাকতে হবে। এটাও তো একটা গল্প বলার মাধ্যম।’

আগামী তিন মাস নির্মাণে নিয়মিত থাকবেন পলাশ। জানালেন, একটি ধারাবাহিক নাটকের প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছেন। নভেম্বরেই শুটিং শুরু করবেন। তবে এখনই সেটার ঘোষণা দিতে চান না। এছাড়া ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে আরও কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজে ব্যস্ত থাকবেন বলেও জানিয়েছেন এ তরুণ।

নির্মাতা হিসেবে অন্য সবার মতো পলাশেরও স্বপ্ন সিনেমা। তিনি বলেন, “সব নির্মাতারই স্বপ্ন থাকে সিনেমা বানাবেন। তবে আমি নিজের ঢঙে, নিজের মতো করে সিনেমাটা বানাতে চাই। কাজের মধ্যে নিজস্বতা তৈরি করতে চাই। অনেকে মনে করেন, ‘ও তো কাবিলা, ও তো পলাশ’। কিন্তু আমি মিডিয়াতে এসেছি মূলত নির্মাতা হওয়ার জন্য। অভিনেতা পলাশ আর নির্মাতা জিয়াউল হক পলাশ, এই দুটো কিন্তু এক না।’’

 

নির্মাণে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে অনুসরণ করেন জানিয়ে পলাশ বলেন, ‘আমি চাইলেই কিন্তু পরিচালক হিসেবে যেমন-তেমন অনেক কাজ করতে পারতাম। কিন্তু সেটা করিনি। কারণ আমার নিজস্ব চিন্তা-ধারা আছে। এ ক্ষেত্রে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাইকে অনুসরণ করি। তিনি গৎবাঁধা, সহজ ধারা থেকে বেরিয়ে গল্প বলার নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। এটা যদিও অনেক কঠিন কাজ। তবুও আমি সেই পথে হাঁটতে চাই।’

কেআই