ফরিদপুর জেলা সদরের কমলাপুর মহল্লায় তার জন্ম। তবে বাবার চাকরির সুবাদে বড় হয়েছেন জেলার সিএনবি স্টাফ কোয়ার্টারে। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল, স্থপতি হবেন। কিন্তু পরিবারের উৎসাহে নাম লেখান বিমানবাহিনীতে।

যশোর বিমানবাহিনীতে পরীক্ষা দিয়ে নির্বাচিত হন। এরপর প্রশিক্ষণ শেষে যোগ দেন পাইলট হিসেবে। একটি জেট ফাইটারে মোট ৩০০ ঘণ্টা উড্ডয়ন সম্পন্নের মাধ্যমে নিজের অবস্থান পাকা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৯৩ সালে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে চাকরিচ্যুত হন তিনি।

সেই বৈমানিক পরবর্তী সময়ে হয়ে উঠলেন দেশের অন্যতম সেরা ও জনপ্রিয় নায়ক। নাম তার রিয়াজ। দেশজুড়ে তার কতখানি পরিচিতি, তা নতুন করে বলা নিষ্প্রয়োজন। আজ ২৬ অক্টোবর নায়ক রিয়াজের জন্মদিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

বিমানবাহিনীর চাকরি হারানো পর রিয়াজ ঢাকায় চলে আসেন। এখানে থাকতেন তার তিন চাচাতো বোন চম্পা, সুচন্দা ও ববিতা। যারা ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী। ঢাকায় আসার পর চাচাতো বোন ববিতার সঙ্গে এফডিসিতে শুটিং দেখতে যান রিয়াজ। তখনই নায়ক জসিমের নজরে পড়েন তিনি। সুদর্শন রিয়াজকে দেখে জসিম সিনেমায় অভিনয়ের পরামর্শ দেন।

সেই পরামর্শ আর ববিতার উৎসাহে সিনেমায় নাম লেখান রিয়াজ। ১৯৯৫ সালে তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘বাংলার নায়ক’ মুক্তি পায়। তবে নায়ক হিসেবে রিয়াজ খ্যাতি পান ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া মোহাম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ সিনেমার সুবাদে।

এরপর কেবল এগিয়ে যাবার পালা। একের পর এক সিনেমা করেছেন, দর্শকরা সেগুলো ভালোবেসে গ্রহণ করেছে। রিয়াজ অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো- ‘নারীর মন’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘এই মন চায় যে’, ‘হৃদয়ের আয়না’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘স্বপ্নের বাসর’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘হৃদয়ের বন্ধন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘কাজের মেয়ে’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘সাবধান’, ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘খবরদার’, ‘লাল দরিয়া’, ‘মিলন হবে কতদিনে’, ‘শাস্তি’, ‘কি যাদু করিলা’, ‘হাজার বছর ধরে’ ইত্যাদি।

নাটকের পর্দায়ও রিয়াজের বিচরণ সাফল্যমণ্ডিত। নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছিলেন রিয়াজ। এছাড়া অনেক খণ্ড নাটকেও দেখা গেছে তাকে। বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েও দর্শকদের মাতিয়েছেন এ নায়ক।

অভিনয় নৈপুণ্যে রিয়াজ ৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়া ৭ বার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

অনেক বছর ধরে রিয়াজ সিনেমায় অভিনয় করেন না। ব্যবসা এবং পরিবার নিয়েই তার ব্যস্ততা এখন। স্ত্রী তিনা ও কন্যা আমীরাকে নিয়ে রিয়াজের সুখের সংসার। তবে সময়-সুযোগ হলে আবারও অভিনয়ে ফিরতে পারেন বলে কিছু দিন আগে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছিলেন এই তারকা।

কেআই/আরআইজে