ক্লাস নাইন থেকে সংগীত চর্চার সূচনা। এরপর বন্ধুদের নিয়ে ব্যান্ড গড়ে তোলা এবং মৌলিক গানসহ আত্মপ্রকাশ। অতঃপর তরুণ প্রজন্মের কাছে আলাদা অবস্থান করে নেওয়া। ‘অ্যাশেজ’ ব্যান্ডের ভোকাল জুনায়েদ ইভানের জীবন সমীকরণ এরকমই। কিন্তু যতটা সংক্ষেপে, সহজে বলে ফেললাম, ততখানি কি সহজ? এক শব্দে উত্তর হলো- না!

রাজধানীর কোনো এক চিলেকোঠায় বসে জানতে চাইলাম জুনায়েদ ইভান মূলত কে? কীভাবে তিনি বেড়ে উঠেছেন? কেমন ছিল তার সংগীত জীবনের প্রারম্ভ কাল? প্রশ্ন শুনে সময়ের দড়ি ধরে ইভান ফিরে গেলেন শৈশবে। আম কুড়ানোর মতো করে স্মৃতিগুলো খুঁজে নিলেন আর বললেন হৃদয়ের ঝাঁপি খুলে।

তার ভাষ্য, ‘ক্লাস নাইনে ওঠার পরই মূলত গানের চর্চা শুরু হয় আমার। বাড়ির কাছেই একটা রেলওয়ের বাংলো ছিল। সেখানে গিয়ে নিজের মতো করে একান্তে গান গাইতাম। মাঝেমধ্যে বন্ধুরাও থাকতো। তবে আমি একাই গাইতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। কেননা, কেউ না থাকলে একেবারে নিজের মতো করে গাওয়া যায়। মানে, কোনো গানের কোরাস যদি দুই লাইন গাইতে হয়, আমি সেটা হয়ত পাঁচ লাইন গাইতাম; আবার ইচ্ছে না হলে এক লাইন গাইতাম। ইচ্ছে হলে লিরিকস কিংবা সুরও নিজের মতো চেঞ্জ করে গাইতাম। আবার দেখা গেল, পছন্দের কোনো লাইন আমি একটানা দশ মিনিট ধরে গাইছি! কারণ কেউ তো শুনছে না।’

ব্যক্তি কিংবা সংগীতশিল্পী যেভাবেই বলি না কেন, জুনায়েদ ইভানের কাছে ওই বাংলো অনেক স্পেশাল। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল অব্দি তিনি সেখানে গিয়েছেন, গিটারের শব্দে কণ্ঠের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।

ক্লাস ওয়ান থেকে এইট পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় ইভানের ফলাফল থাকতো প্রথম দিকেই। কারণ পড়াশোনার প্রতি তিনি অনেক সিরিয়াস ছিলেন। কিন্তু ব্যত্যয় ঘটে নাইনে ওঠার পর। এ সময়টাতে তিনি যেমন গানের চর্চায় মনোযোগী হন, পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়াতে ডুবে যান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ওখানে একটা পাবলিক লাইব্রেরী আছে। সেখানে গিয়ে প্রতিদিন বই পড়তাম। আমার ক্লাস ছিল ডে শিফটে। তাই সকালে স্কুলের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হতাম। কিন্তু আমার সময় কাটতো লাইব্রেরিতে। দেশ-বিদেশের প্রচুর বই পড়েছি তখন। ওখানে আমার যাতায়াত এতো নিয়মিত ছিল যে, লাইব্রেরির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাঝেমধ্যে এমন হতো, তারা আমাকেই ডেস্কে বসিয়ে রেখে যেতেন। আমি মানুষের নাম, বই এন্ট্রি করতাম। কখনো কখনো সারারাত সেখানে বসে বই পড়েছি। এমন না যে, খুব বুঝতাম। কারণ আমি তখন সবে কিশোর। রাতভর বই পড়ার চেয়ে বিষয়টাকে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর মনে হতো।’

বই-গানে ডুবে যাওয়ার প্রভাব পড়ে পাঠ্যজীবনে। ক্লাসের মেধাবী ছাত্রটা এক ধাক্কায় ৫ বিষয়ে ফেল। জুনায়েদ ইভানের ভাষ্য, ‘তখন বই আর গান নিয়ে এতো বেশি মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম, ক্লাস নাইনে আমি ৫ বিষয়ে ফেল করি। এবং স্কুল থেকে আমার যে রিপোর্ট দিয়েছিল, সেখানে দেখা যায় আমি পুরো বছরে পরীক্ষা ছাড়া মাত্র ৫-৬ দিন উপস্থিত ছিলাম।’

ওই সময়টাতে হঠাৎ এমন পরিবর্তন আসে কেন? কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা কারণ ছিল কি? জবাবে জুনায়েদ ইভান বললেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা নেই। গান-বইয়ের চর্চা তো একটু একটু করেই হয়। আমারও তাই হয়েছে। তবে আমি হয়ত একটু বেশিই মিশে গিয়েছিলাম। এ জন্য ওই বছরটাকে আমার কাছে খুব অদ্ভুত আর অন্যরকম লাগে।’

নাইনে ফেল করা জুনায়েদ ইভান পরবর্তীতে আবারও পড়াশোনায় নজর দেন। এক এক করে পাশ করেন এমবিএ পর্যন্ত। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, তিনি এখনো অব্দি নিজের বিবিএ ও এমবিএ-এর রেজাল্ট জানেন না! এর কারণ জানতে চাইলে ইভান বলেন, ‘আমার আসলে রেজাল্ট জানাটাকে প্রয়োজনীয় মনে হয়নি কখনো। প্রশ্ন আসতে পারে, যদি বিবিএ’র রেজাল্ট না-ই জানি, তাহলে এমবিএ করলাম কীভাবে? আসলে আমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ-এমবিএ করেছি। আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্যার, ম্যাম, কো-অর্ডিনেটররা আমাকে ভালোভাবেই চিনতেন। ফরম-ফিলাপের সময় আমার সিজিপিএ জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু আমি তো জানি না সেটা। এটা শুনে তারাই চেক করে পরে সিজিপিএ লিখে নিয়েছিলেন। সেই রেজাল্ট আমি এখনো জানি না।’

কেআই/আরআইজে