মাদ্রাজের (বর্তমান চেন্নাই) এক হিন্দু পরিবারে তার জন্ম। বাবা নাম রেখেছিলেন এ এস দিলীপ কুমার। জন্মের ২০ বছর পর মা, বোনসহ তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর তার নাম হয় আল্লাহ রাখা রহমান। সংক্ষেপে এ আর রহমান।

নামটাই যথেষ্ঠ তার পরিচয়ের জন্য। ভারতীয় উপমহাদেশের কোনো সংগীত পরিচালক তার মতো সাফল্য, খ্যাতি তো অর্জন করতে পারেননি। বিনোদন বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার অস্কার, সংগীতের সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্র্যামি উঠেছে তার হাতে। তার পরিচিতি, প্রভাব বিশ্বজুড়েই বিস্তৃত।

দিলীপ কুমার থেকে এ আর রহমান হয়ে বিশ্বজয় করা সেই মানুষটির জন্মদিন আজ। ১৯৬৬ সালের ৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই মিউজিক ম্যাজিশিয়ান।

এ আর রহমানের বাবা আর কে শেখর মুধালিয়ার ছিলেন মালায়ালাম সিনেমার সংগীত পরিচালক ও কন্ডাক্টর। তার কাছেই রহমানের সংগীতে হাতেখড়ি। তখন একটু-আধটু কি-বোর্ড বাজানো শিখেছিলেন।

মাত্র নয় বছর বয়সে বাবাকে হারান এ আর রহমান। এরপর মায়ের অনুপ্রেরণায় সংগীতে মনোনিবেশ করেন। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ থেকে মিউজিকের ওপর উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন। দেশে ফিরে নিজের একটি স্টুডিও দেন। কাজ শুরু করেন বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল বানানোর মাধ্যমে।

১৯৯২ সালে তামিল সিনেমা নির্মাতা ও প্রযোজক মনি রত্নমের হাত ধরে সিনেমায় পথচলা শুরু হয় এ আর রহমানের। ‘রোজা’ সিনেমার মাধ্যমে রূপালি পর্দার সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাৎ। অর্জন করে নেন সেরা সংগীত পরিচালক হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। রাতারাতি আলোচনায় চলে আসেন তরুণ এ আর রহমান।

এরপর একে একে সুরের ম্যাজিক ছড়িয়ে দেন এ আর রহমান। বিভিন্ন ভাষার সিনেমায় তার সুর-সংগীতে মুগ্ধ হতে থাকে মানুষ। প্রায় দেড়শটি সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘রোজা’, ‘যোদ্ধা’, ‘জেন্টলম্যান’, ‘কাধালান’, ‘বোম্বে’, ‘রঙ্গিলা’, ‘মুথু’, ‘কাধাই দেসাম’, ‘মিনসারা কানাভু’, ‘জিনস’, ‘দিল সে’, ‘ডলি সাজা কে রাখনা’, ‘সাঙ্গামাম’, ‘তাল’, ‘আলাইপায়ুথে’, ‘ওয়ান টু কা ফোর’, ‘লাগান’, ‘দ্য লিজেন্ড অব ভগত সিং’, ‘বয়েজ’, ‘মীনাক্ষী: অ্যা  টেল অব থ্রি সিটিজ’, ‘স্বদেশ’, ‘রাঙ্গ দে বাসান্তি’, ‘গুরু’, ‘শিবাজি’, ‘যোধা আকবর’, ‘জানে তু ইয়া জানে না’, ‘গজনী’, ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’, ‘দিল্লি ৬’, ‘ইয়ে মায়া চিসেভ’, ‘রাবণ’, ‘এন্থিরাম’, ‘১২৭ আওয়ারস’, ‘রকস্টার’, ‘জাব তাক হ্যায় জান’, ‘মারিয়ান’, ‘রানঝানা’, ‘হাইওয়ে’, ‘তামাশা’, ‘মুহাম্মদ: দ্য মেসেঞ্জার অব গড, ‘মহেঞ্জোদারো’, ‘ওকে জানু’, ‘শচীন: অ্যা বিলিয়ন ড্রিমস’, ‘মম’, ‘মেরসাল’, ‘বেয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’, ‘সরকার’, ‘২.০’, ‘বিগিল’, ‘দিল বেচারা’।

এ আর রহমানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’। এই সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেই তিনি ৮১তম অস্কারে সেরা অরিজিনাল মিউজিক স্কোর ও সেরা অরিজিনাল সং-এর জন্য একসঙ্গে দুটি অস্কার জেতেন। এছাড়াও দুটি গ্র্যামি, একটি গোল্ডেন গ্লোব ও একটি বাফটা অ্যাওয়ার্ড পান এই সিনেমার জন্যই।

কিংবদন্তি এই শিল্পীর প্রাপ্তির তালিকা অনেক সমৃদ্ধ ও লম্বা। ২০০৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি। ২০০০ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় উপাধি ‘পদ্মশ্রী’ এবং ২০১০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ অর্জন করেন। এছাড়া বিশ্বের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে।

এগুলোর বাইরে এ আর রহমান ১৫ বার ফিল্মফেয়ার, ১৭ বার ফিল্মফেয়ার সাউথ, ১১ বার আইফা অ্যাওয়ার্ড, ছয়বার তামিলনাডু স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন।

কেআই/আরআইজে