সুরের সরস্বতী দেবী বলা হয় তাকে। গান গেয়ে নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি অদ্বিতীয়। উপমহাদেশের সংগীতে তাকে মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করে সবাই। সেই লতা মঙ্গেশকর চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

তার মন-প্রাণ আর অস্তিত্ব জুড়ে সংগীতের বসবাস হলেও দারুণ ভালোবাসতেন ক্রিকেটও। ভারতের ক্রিকেট ইসিহাসের অন্যতম সেরা তারকা ব্যাটিং মাস্টার শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত যোগসূত্র’ ছিল লতা মঙ্গেশকরের। শচীনকে ছেলের মতোই জানতেন অগণিত জনপ্রিয় গানের এই গায়িকা। শচীনই প্রকৃত অর্থে ‘ভারতরত্ন’-এই কথাও বহুবার বলেছিলেন তিনি।

শচীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক যে কতখানি আন্তরিক ছিল, তা জানিয়েছিলেন লতা। বলেছিলেন, ‘শচীন আমাকে মায়ের মতোই ভালোবাসেন। আমিও মায়ের মতোই ওর জন্য প্রার্থনা করি। প্রথম যে দিন আমাকে ‘আই’ (মা) বলে ডেকেছিলেন, সে দিনটি কখনও ভুলব না। আমারও মনে হয়েছিল, ওর মতো ছেলে পাওয়া সৌভাগ্যের।’

পুত্রস্নেহ থাকলেও শচীনের জন্মদিনে তা কখনও উদ্‌যাপন করা হয়ে ওঠেনি লতার। কারণও জানিয়েছিলেন গায়িকা। একবার সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, ‘শচীনের জন্মদিন ২৪ এপ্রিল। সে দিন আমার বাবার (দীননাথ মঙ্গেশকর) মৃত্যুবার্ষিকী। ফলে ওই দিনটিতে আমাদের কখনও দেখা হয়নি। একবার তো আমরা ২৩ এপ্রিল দেখা করেছিলাম।’

প্রসঙ্গত, ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর লতার জন্ম এক মারাঠি পরিবারে। বাবার হাত ধরেই গান ও অভিনয়ের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৩-১৪ বছরে প্রথম গান গেয়েছিলেন মারাঠি সিনেমায়। হিন্দিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন ‘মজবুর’ সিনেমায়। লতার সুরেলা কণ্ঠ সিনেমা ও গানে প্রাণ ঢেলে দিতো। নক্ষত্রপতনে তাই শোকস্তব্ধ দুনিয়া।

২৭ দিন ধরে করোনা, নিউমোনিয়া আর বার্ধক্যজনিত জটিলতার সঙ্গে লড়াই করেছেন লতা মঙ্গেশকর। ৯ জানুয়ারি তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছিল লতার। ৩০ জানুয়ারি তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ভেন্টিলেশন থেকে বের করেও নিয়ে আসা হয় সুরসম্রাজ্ঞীকে। কিন্তু দুদিন আগে পুনরায় তার অবস্থার অবনতি হয়। অবশেষে রোববার সকালে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

আরআইজে/কেআই