হয়ত তার কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে। অচেনা ভুবনে একান্ত নির্জনে তিনি পড়বেন স্বরচিত কবিতা। কিংবা গুনগুন করে গাইবেন নিজের লেখা বিখ্যাত গানগুলো। সেই পাঠ-গুনগুন কেউ শুনবে না বটে। কিন্তু এপারে যারা বাংলা গানের শ্রোতা, তার রেখে যাওয়া গানগুলো তাদের কানে বাজবে ঠিকই।

বলছি কালজয়ী গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর কথা। দীর্ঘদিন অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে হার মেনেছেন এই নন্দিত ব্যক্তিত্ব। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।

চলে গেলেও কাওসার আহমেদ চৌধুরী নিজেকে কালজয়ী করে নিয়েছেন জীবদ্দশাতেই। লিখেছেন বিখ্যাত কিছু গান। যেগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে গেছে বিশুদ্ধ বাতাসের মতো।

একটি গান রচনার পর কাওসার আহমেদ চৌধুরী বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুকে বলেছিলেন, এটা পরে গাওয়ার গান হলেও এখনই যেন গেয়ে ফেলেন। বিলম্ব করলেন না রক লিজেন্ড। গেয়ে ফেললেন, ‘এই রূপালি গিটার ফেলে, একদিন চলে যাবো দূরে বহুদূরে’। সেই গান অর্জন করে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। গানের কথার মতো, আইয়ুব বাচ্চু যেমন চলে গেছেন। তেমনি চলে গেলেন কাওসার আহমেদ চৌধুরীও।

কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর একটি ‘যেখানে সীমান্ত তোমার, সেখানে বসন্ত আমার’। এই অমর গানটিও রচনা করেছেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। আধুনিক বাংলা গানে তার শব্দমালা কতটা সুবাস ছড়িয়েছে, তার অন্যতম উদাহরণ গানটি।

বরেণ্য শিল্পী নিয়াজ মুহাম্মদ চৌধুরীর নাম উচ্চারিত হলেই যে গানটি সবার মনে উঁকি দেয়, সেটা হলো ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে, মনে পড়ল তোমায়’। এই অনন্য গানের রচয়িতাও কাওসার আহমেদ চৌধুরী।

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লাকী আখন্দের গাওয়া ‘আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না’ গানটি তো এখনো সবার মনে চিরসবুজ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই গানকে লালন করছে, নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করছে। কালজয়ী এই গানটিও লিখেছেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী।

এছাড়া সামিনা চৌধুরীর কণ্ঠে ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ফিডব্যাক ব্যান্ডের ‘মৌসুমি, কারে ভালোবাসো তুমি’, লাকী আখন্দের ‘এই নীল মণিহার’-এর মতো নন্দিত গানগুলো রচনা করে নিজেকে অবিস্মরণীয় গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। তাই চলে গেলেও কাওসার আহমেদ চৌধুরী বেঁচে থাকবেন তার লেখা গানের সুরে, অন্তমিলে।

কেআই/আরআইজে