আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চান না সরকারদলীয় অধিকাংশ সংসদ সদস্য। সংসদীয় দলের সভায় এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন একজন সদস্য। তবে এ বিষয়ে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনে করেন তারা

সরকারদলীয় একাধিক সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না করার প্রস্তাব দিয়েছেন সরকারদলীয় হুইপ ও শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আতিউর রহমান আতিক। ওই সভায় এ প্রস্তাবের পক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান এমপিরা। প্রস্তাব প্রসঙ্গে হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ওই প্রস্তাব গৃহীত হয়নি, এখন দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন হচ্ছে।’

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্দেশ্য ছিল দলের তৃণমূলকে শক্তিশালী করা। কিন্তু দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গিয়ে তৃণমূলে সংঘাত, সহিংসতার পাশাপাশি দলে অনৈক্য বৃদ্ধি পেয়েছে। চরমভাবে ভেঙে পড়েছে দলীয় শৃঙ্খলা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিভাগের একটি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্দেশ্য ছিল দলের তৃণমূলকে শক্তিশালী করা। কিন্তু দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গিয়ে তৃণমূলে সংঘাত, সহিংসতার পাশাপাশি দলে অনৈক্য বৃদ্ধি পেয়েছে। চরমভাবে ভেঙে পড়েছে দলীয় শৃঙ্খলা।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই হচ্ছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও সব পঞ্চায়েত নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়। এটা হলে দলের নিবেদিত প্রাণ হিসেবে যারা কাজ করেন তারা মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পান

কাজী জাফরুল্লাহ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, আওয়ামী লীগ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল বিভাগের অপর এক সংসদ সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হলে আমাদের জন্য ভালো। কারণ স্থানীয়পর্যায়ে যারা জনপ্রতিনিধি হতে নির্বাচন করেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তারা সবাই নৌকার লোক, আওয়ামী লীগের কর্মী। একাধিক জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীও সেখানে অংশ নেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা নৌকা প্রতীক পান তাদের জনপ্রিয়তা থাকে না। তাদের চেয়ে অন্য প্রার্থীরা যোগ্য ও জনপ্রিয় বলে চিহ্নিত হন। নৌকা প্রতীক না পেলে বা দলীয় মনোনয়ন না পেলে তারা ভাবেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য তাকে মনোনয়ন দেননি। এর প্রভাব পড়ে জাতীয় নির্বাচনে। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দেয়।

ইসি বলছে, ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় ৪১ জন নিহত হন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই হচ্ছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও সব পঞ্চায়েত নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়। এটা হলে দলের নিবেদিত প্রাণ হিসেবে যারা কাজ করেন তারা মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পান।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় ১০৮ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। ওই নির্বাচনে প্রায় ২০০ জনের বেশি প্রতিনিধি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাদের অধিকাংশই সরকারদলীয় মনোনীত প্রার্থী ছিলেন

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে এমপি-মন্ত্রীদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকেন। তিনি কাকে সমর্থন দেবেন? কিন্তু এখানে তো এমপির মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ নেই। এমপিরা পছন্দের বা যোগ্য তিন/চারজন প্রার্থীর নাম পাঠাবেন আমাদের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের কাছে। সেখানে আমাদের মাননীয় নেত্রীই দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন।

২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় 

২০১৬ সালে দেশের চার হাজার ৫৭১টি ইউনিয়নের মধ্যে ছয় ধাপে তিন হাজার ৯০৫টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এসব নির্বাচনে সহিংসতায় ৪১ জন নিহত হন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হিসেবে দুই হাজার ২৪২ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ৩০৫ জন চেয়ারম্যান হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এক হাজার ৩৭৬ জন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় ১০৮ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। ওই নির্বাচনে প্রায় ২০০ জনের বেশি প্রতিনিধি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাদের অধিকাংশই সরকারদলীয় মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।

এইউএ/আরএইচ/এমএআর