হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ

জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া নিয়ে প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের ‘হাঁকডাকে’ পাত্তা দিচ্ছেন না দলটির নেতারা। তারা বলছেন, এরশাদ-বিদিশা দম্পতির বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তান এরিক এরশাদকে সামনে রেখে কিছুটা সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন বিদিশা।

বিভিন্ন সময় দলের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে (জি এম কাদের) নিয়ে তিনি নানা মন্তব্য করছেন। এভাবে তাকে বিতর্কিত করে আলোচনায় আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু তার এমন বক্তব্য ও হাঁকডাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। কারণ, বিদিশা জাতীয় পার্টির কেউ নন। দলের কোনো পর্যায়ে তার সদস্য পদ নেই। ফলে পার্টির রাজনীতিতে তার সক্রিয় হওয়ার কিছু নাই।

জাপার নেতারা আরও বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মৃত্যুর আগে একটি ট্রাস্ট গঠন করে সেখানে তার সব সম্পত্তি দান করে যান। সেই ট্রাস্টের টাকায় এরশাদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কিছু প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। এসব প্রোগ্রামে এরশাদের ছেলে এরিককে সামনে রেখে গত দুই বছর মিডিয়ার সামনে কিছু বক্তব্য দিয়ে আসছেন বিদিশা। এছাড়া, দলের কিছু লোক সুবিধা পাওয়ার আশায় সেসব প্রোগ্রামে যোগ দেন। তা দেখে বিদিশা নিজেকে জাতীয় পার্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতে শুরু করেছেন। আদতে এটা তার স্বপ্নই বলা যেতে পারে। কারণ, জাতীয় পার্টিতে একক আধিপত্য জি এম কাদেরের। আগে দলে রওশন এরশাদের প্রভাব থাকলেও সেটা এখন কমতে শুরু করেছে। ফলে বিদিশা যতই লম্ফঝম্প করুন তাতে কোনো লাভ হবে না।

গত ২৬ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সভায় বিদিশা এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি কখনও কাদের (জি এম কাদের) পার্টি হতে পারে না। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির আজীবন চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করব। আমি আমার দুই ছেলেকে (সাদ এরশাদ ও এরিক এরশাদ) নিয়ে সারাদেশে লাঙলের চাষ করব। আমার প্রতি অনেক অত্যাচার হয়েছে। ভয় পাইনি, ভেঙে পড়িনি।

পুত্র এরিক এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে এরশাদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করছেন বিদিশা

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কে কোথায় কী বলল তাতে কিছু আসে যায় না। এসবে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। আমার কোনো মন্তব্যও নেই।’

‘বিদিশা নামের কাউকে চেনেন না’— সাফ জানিয়ে দিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষ প্রতিদিন কত কথা বলে। সবকিছুতে কি গুরুত্ব দিতে হবে? জাতীয় পার্টির কোনো নেতাকর্মী কিছু বললে আমরা তা দেখতাম। এর বাইরে তো কাউকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।’

বিদিশার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে এরশাদের ছেলে ও জাপার যুগ্ম মহাসচিব সাদ এরশাদ বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। অনেকে অনেক কথা বলেন। দেখা যাক কী হয়।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবে গত ২৬ জুন এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় বিদিশা

তবে জাতীয় পার্টির একটি সূত্র বলছে, এক সময় রওশন এরশাদের বিরোধী ছিলেন বিদিশা এরশাদ। ভালো সম্পর্ক ছিল জি এম কাদেরের সঙ্গে। কিন্তু ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর জি এম কাদের ও বিদিশার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তখন থেকে রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিদিশা। আর চাচা জি এম কাদেরকে চাপে রাখতে সাদ এরশাদও প্রেসিডেন্ট পার্কের প্রোগ্রামগুলোতে যোগ দেন বিদিশার সঙ্গে।

এদিকে, এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ট্রাস্টের আয়োজনে আগামী ১৪ জুলাই প্রেসিডেন্ট পার্কে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান বিদিশা এরশাদ। ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, ওই অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি এবং নিজ রাজনীতির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলার থাকলে সেখানে বলবেন।

পুত্র এরিক এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতির মাঠে বিদিশা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক কো-চেয়ারম্যান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদিশা এরশাদের কোনো বক্তব্য নিয়ে দলের ফোরামে আলোচনা হয় না। তাকে নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে কোনো ভাবনা নেই। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে বিদিশা যেসব বক্তব্য দেন, সেগুলো নিয়ে তিনি (জি এম কাদের) মাঝে-মধ্যে হয়তো কিছুটা বিব্রত বোধ করতে পারেন। কিন্তু এ নিয়ে প্রকাশ্যে বা দলীয় ফোরামে কোনো কথা বলেন না।

ওই নেতা আরও বলেন, বিদিশা এখন রওশনের পরিবার ও তার ঘরানার কিছু লোকের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আগামীতে জাতীয় পার্টির সাপোর্ট নিয়ে কোনো আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। এর বাইরে আর কিছুই নয়।
 
এএইচআর/এমএআর/