টানা তিনদিন একই অঙ্কে ঘুরছে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকার প্রয়োগ কার্যক্রমের দশম দিন আজ। শুরুতে নানা গুজব-অপপ্রচারে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কম হলেও পরবর্তীতে বাড়তে শুরু করেছে সংখ্যা। তবে গত সোমবার থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত একই অঙ্কে ঘুরছে এ সংখ্যা। বিষয়টি পুরোপুরি ‘কাকতালীয়’ বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

টিকা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বুধবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে নারী-পুরুষ মিলিয়ে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন। পরবর্তী দিনও (১৬ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে টিকা গ্রহণ করেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৯০৩ জন। এমনকি আজও (বুধবার) দুই লাখ ২৬ হাজারের অঙ্কে রয়েছে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা। এদিন সারাদেশে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৭৫৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে আরও ৪৪৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ৮৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৩১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গত তিনদিনের সংখ্যাটা কাকতালীয়ভাবে মিলে যাচ্ছে। এখানে তো আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা সারাদেশে খোঁজ নিয়ে যে সংখ্যাটা পাচ্ছি, সেটাই যোগ করে আপনাদের দিয়ে দিচ্ছি।’

১৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে নারী-পুরুষ মিলিয়ে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন। পরবর্তী দিনও (১৬ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে টিকা গ্রহণ করেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৯০৩ জন। এমনকি আজও (বুধবার) দুই লাখ ২৬ হাজারের অঙ্কে রয়েছে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও দেখা গেছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন আরও দুই লাখ ২৬ হাজার ৭৫৫ জন। এনিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী মোট টিকা নিয়েছেন ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৮ জন। নতুন ২০ জনসহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৫১০ জনের।

বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি এবং ময়মনসিংহ বিভাগের মানুষ সবচেয়ে কম টিকা নিয়েছেন। এ সময়ে ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ৮৭০ জন, যার মধ্যে সর্বোচ্চ রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন দুই হাজার ৯০০ জন।

গত তিনদিনের সংখ্যাটা কাকতালীয়ভাবে মিলে যাচ্ছে। এখানে তো আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা সারাদেশে খোঁজ নিয়ে যে সংখ্যাটা পাচ্ছি, সেটাই যোগ করে আপনাদের দিয়ে দিচ্ছি

ডা. মিজানুর রহমান, পরিচালক, এমআইএস

টিকাগ্রহীতার সংখ্যা না বাড়ার কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনও বিশ্বাস করে করোনা থেকে আল্লাহই বাঁচাবে। টিকা নেওয়ার কোনো দরকার নেই। ফলে টিকা নিতেও আসছে না। কেউ আসতে না চাইলে তাদের আমরা কী করতে পারি? তবে আশা করছি, এগুলো ধীরে ধীরে কমে যাবে। টিকাগ্রহীতার সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

নিবন্ধন বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আজ পর্যন্ত ২৫ লাখের মতো নিবন্ধন হয়েছে। মানুষও স্বেচ্ছায় এসে নিবন্ধন করছে। তবে, নিম্নশ্রেণি থেকে ওরকম সাড়া এখনও পাচ্ছি না।’

টিকা নিচ্ছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী, এখনও টিকা নিতে আগ্রহ কম সাধারণের মধ্যে

এসএমএস জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা টিকাকেন্দ্রে টিকা প্রয়োগের ক্যাপাবিলিটি যতটুকু, সেখান থেকে ঠিক ততজনকেই এসএমএস দেওয়া হচ্ছে। যে বলছে এসএমএস পাচ্ছে না, সে এটার বাইরে আছে। সে হয়তো আজ না পেলে কাল পাবে, নয়তো পরশু পাবে। এটা কোনো সমস্যা না। টিকা নেওয়ার সময় হলে পর্যায়ক্রমে সবাই এসএমএস পাবে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে করোনার টিকা নিয়েছেন ৭০ হাজার ২৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪৫ হাজার ৫৭৮ এবং নারী ২৪ হাজার ৪৪৭ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে ১৪ জনের। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এ বিভাগে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মোট চার লাখ ৪৫ হাজার ৪৬৯ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে ১২৪ জনের।

গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনও বিশ্বাস করে করোনা থেকে আল্লাহই বাঁচাবে। টিকা নেওয়ার কোনো দরকার নেই। ফলে টিকা নিতেও আসছে না। কেউ আসতে না চাইলে তাদের আমরা কী করতে পারি

ডা. মিজানুর রহমান, পরিচালক, এমআইএস

ময়মনসিংহ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১০ হাজার ৭৭৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ছয় হাজার ৭০৯ এবং নারী চার হাজার ৬৪ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে চারজনের। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ বিভাগে ৭১ হাজার ৩৭৫ জন টিকা নিয়েছেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৩৩ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৪৪ হাজার ৭৮৩ জন মানুষ। এর মধ্যে পুরুষ ২৯ হাজার ২৫২, নারী ১৫ হাজার ৫৩১ জন। তাদের কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মোট তিন লাখ ৬৪ হাজার ৭৪২ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ১২৫ জনের।

রাজশাহী বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ২৭ হাজার ১০৮ জন। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৯০০ জন পুরুষ এবং ১০ হাজার ২০৮ জন নারী। তাদের কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। সবমিলিয়ে এ বিভাগে মোট টিকা নিয়েছেন এক লাখ ৮০ হাজার ৭৯১ জন, এর মধ্যে মোট ৪৫ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে।

রংপুর বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১৯ হাজার ৭৫৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৫২৮ এবং নারী সাত হাজার ২৩১ জন। কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এ বিভাগে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে সর্বমোট এক লাখ ৪৭ হাজার ২০৪ জন টিকা নিয়েছেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৫৯ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ হাজার ৯৩২ জন পুরুষ ও ১০ হাজার ৫০৪ জন নারীসহ মোট ২৮ হাজার ৪৩৬ জন মানুষ টিকা নিয়েছেন খুলনা বিভাগে। টিকা নেওয়ার পর দুজনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এ জেলায় মোট এক লাখ ৮১ হাজার ৬২১ জন টিকা নিয়েছেন, এর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৭৬ জনের।

বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১৩ হাজার ১৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ আট হাজার ৪৮৪ এবং নারী চার হাজার ৬৬২ জন। কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এ বিভাগে সর্বমোট টিকা নিয়েছেন ৭৬ হাজার ৮০৫ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ২৪ জনের।

সিলেট বিভাগের গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১২ হাজার ৭২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ সাত হাজার ৮২০ জন এবং নারী চার হাজার ৯০৫ জন। কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত সর্বমোট টিকা নিয়েছেন এক লাখ ১৮ হাজার ৩৬১ জন, মোট ২৪ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

টিআই/এমএআর/